ভন রাজ্যে থেকে বাড়িতে ফেরার ট্রেন ধরার প্রস্তুতি পরিযায়ী শ্রমিকদের। ছবি: এএফপি।
করোনা পরিস্থিতি সামলাতে ভাল কাজ হলেও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি অত্যন্ত অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করেন নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত। তবে এই বিষয়ে দায়িত্বের বড় অংশ রাজ্যগুলির উপরে চাপিয়েছেন তিনি।
পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। কান্তের মতে, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়টি যে একটি চ্যালেঞ্জ, তা বোঝাটাও জরুরি। কারণ বছরের পর বছর ধরে আমরা এমন আইন তৈরি করেছি, যার জেরে অর্থনীতিতে অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে।’’ তাঁর মতে, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা আরও ভাল ভাবে নিষ্পত্তি করা রাজ্য সরকারগুলির দায়িত্ব। কারণ, ভারতের মতো বড় দেশে কেন্দ্রের ভূমিকা খুবই কম। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। প্রত্যেক শ্রমিকের বিষয়ে যত্নশীল হতে চাইলে রাজ্য, জেলা বা স্থানীয় স্তরে আরও ভাল কাজ করা যেত।’’
পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে এ দিনও। উত্তরপ্রদেশের ফিরোজ়াবাদে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মালদহের বাসিন্দা দুই শ্রমিকের। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় দু’মাস ধরে বহু চেষ্টা করেও বাড়ি ফিরতে পারেননি মালদহের চাঁচলের ডোমাপীড়ের বাসিন্দা জাহির (৩০)। শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে বাসে উঠেই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তিনি বাড়ি ফিরছেন।
গত কাল তাঁরা যে বাসে ফিরছিলেন সেটি ফিরোজ়াবাদে দাঁড়িয়েছিল। বাসের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জাহির-সহ কয়েক জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মালদহেরই হরিশ্চন্দ্রপুরের বেজপুরা এলাকার শ্রমিক মহবুল আলিও (২৮)। তখনই পিছন থেকে অন্য একটি বাসের ধাক্কায় তাঁদের বাসটি অনেকটা এগিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ওই বাসের বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান জাহির ও মহবুল।
আরও পড়ুন: লাইনে ভিড়, পথ বদলাল শ্রমিক ট্রেন
আবার রাজস্থান থেকে পুরুলিয়ার গ্রামের বাড়িতে ফেরার পথে বাস দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন পুরুলিয়ার ২২ জন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রামের মদন মাহাতো শনিবার ফোনে বলেন, ‘‘আমরা রাজস্থানের অজমের জেলার কিশনগড়ে একটি পাথর কাটার কারখানায় কাজ করতাম। বাড়ি ফেরার জন্য সবাই মিলে একটা বাস ভাড়া করি।’’ পথে কানপুর-ইলাহাবাদ সড়কে, ইলাহাবাদ পৌঁছনোর আগেই বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে। পুরুলিয়া ১ ব্লকের গাড়াফুসড় গ্রামের দীপক মাহাতোও ওই বাসে ফিরছিলেন। ফোনে তিনি বলেন, ‘‘ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। পরে বুঝতে পারি, বাস উল্টে গিয়েছে।’’
তেলঙ্গানায় হায়দরাবাদের উপকণ্ঠে গোরেকুন্টা গ্রামের কুয়ো থেকে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ত্রিপুরার যে শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দেহ উদ্ধার হয়েছে, তাঁরা কী ভাবে মারা গিয়েছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।