ভারতকে শান্তি ফেরানোর বার্তা দিল মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পরে বাংলাদেশে তৈরি হওয়া অস্থিরতা এবং নয়াদিল্লি-ঢাকা স্নায়ুর লড়াইয়ের মধ্যে ভারতকে শান্তি ফেরানোর বার্তা দিল মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম ঢাকা থেকে ফোনে জানালেন, “ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে, আমরা তা প্রশমিত করতে চাইছি। এই উত্তেজনা অনলাইনে কৃত্রিম ভাবে ছড়ানো হচ্ছে। আমি ভারতীয় সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, তাঁরা এসে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখে তারপর সিদ্ধান্তে আসুন। কিছু ঘটনা ঘটেছে যা নিন্দনীয়, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। চট্টগ্রামে পুলিশি নিরাপত্তা কতটা বাড়ানো হয়েছে তা আপনারা সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারবেন।” তাঁর কথায়, “ইসকনের সব ধর্মীয় নেতার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের নিষিদ্ধ করার কোনও প্রশ্ন কখনও ওঠেইনি। ভারতের কাছে ভুল ব্যাখ্যা যাচ্ছে। কোনও ধর্মীয় সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা আমাদের লক্ষ্য নয়।” সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বাংলাদেশের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে ভারতীয় পতাকা বিছিয়ে রাখার ছবি, যার উপর দিয়ে ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরা হেঁটে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বিশদে না গিয়ে শফিকুল বলেন, “কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে যা নিন্দনীয়। একটি মন্দিরে ঢিল ছোড়ার খবর আসার পরে আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়েছি।”
বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে আজ মুখ খুলেছেন বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী নেতারা। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিএনপি-র সহ-সভাপতি আব্দুল আওয়াল মিন্টুর বক্তব্য, “বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে যে ভাবে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে পুরোদস্তুর সাম্প্রদায়িক হিংসা চলছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সেটা মেলে না। আমি সম্প্রতি নোয়াখালি ঘুরে এলাম। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সর্বত্রই যাতায়াত চলছে। কোথাও তো দেখছি না বসবাসকারী হিন্দু ভাইদের সঙ্গে মুসলমান গোষ্ঠীর কোনও তর্কাতর্কি বা উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। কোনও মানুষ নিহত হওয়ার প্রশ্নই নেই, আহতও কি হচ্ছেন? জাল ভিডিয়োতে অনেক কিছুই দেখানো যেতে পারে।” ভারতের পতাকা ক্যাম্পাসের পড়ুয়াদের মাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতার অবশ্য বক্তব্য, কোনও রাষ্ট্রের পতাকার অবমাননা করার ১০০ শতাংশ বিরোধী বিএনপি। তাঁর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে কারা ঢুকে কী করেছে, আমাদের ধারণা নেই। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্র সম্পর্কে আমরা অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে চাই বরাবরই। ভারত যদিও অভিযোগ করে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতা তৈরির জন্য আমাদের হাত ছিল, কিন্তু বিএনপি-র ইতিহাসে নেই প্রতিবেশীর সঙ্গে শত্রুতা করা। আমাদের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ইতিহাস জড়িত। ফলে সেটা নষ্ট করলে উভয়েরই ক্ষতি। তারেক রহমান থেকে প্রতিটি বিএনপি শীর্ষ নেতার বিবৃতি দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
বিএনপি নেতৃত্বের বক্তব্য, তাঁরা সরকারে নেই। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার কী ভাবে বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করছে সে ব্যাপারে তাঁদের কোনও হাত নেই। এক বিএনপি নেতার কথায়, “এই কারণেই আমরা দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক একটি সরকার চাইছি, যাকে অন্য দেশ সম্মান করবে। সে ক্ষেত্রে সেই সরকারের নির্দিষ্ট বিদেশনীতি, কর্মসূচি, প্রতিবেশী নীতি থাকবে। আবার এটাও ঘটনা, গত ১৫ বছরে আমাদের বিরুদ্ধে এক লাখ ৬২ হাজার মামলা হয়েছে, যার মধ্যে অনেক হিন্দুও রয়েছেন। তখন তো ভারত কিছু বলে না। যে কারণেই হোক আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের বেশি পছন্দ করে। কিন্তু রাজনীতি করলে তিনি আওয়ামী লীগের পরিচয়ে চিহ্নিত আর কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ হলেই সে সংখ্যালঘুর পরিচয় নেবে, এটা তো ঠিক নয়।”
পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর সহ-সচিব হামিদুর রহমান আজাদের কথায়, “চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে তো ইসকন থেকেই বহিষ্কার করেছে। সবাই তার সাক্ষী। যে ঘটনা ঘটেছে তা হিন্দু ধর্মাবলম্বীর বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা বলে আমরা মনে করি না। সনাতন ধর্মের কাউকে আক্রমণ করা হয়নি। বাংলাদেশে নৈরাজ্য দমনের পদক্ষেপ হিসেবেই করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতি ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ থাকবেন। সম্প্রীতি থাকবে। কিন্তু সেই স্পিরিটের বিপরীতে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে দেশের আইনশৃঙ্খলা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহও হয়েছে।”