Jammu-Kashmir Terror Attack

পহেলগাঁওয়ের নায়কেরা: কেউ জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা, কেউ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকদের সরিয়ে নিয়ে যান নিরাপদ স্থানে

গত ২২ এপ্রিলের সেই হামলার ঘটনায় দু’টি বিপরীত চিত্র উঠে এসেছে। যখন জঙ্গিদের হামলায় সাহায্য করার জন্য এক দল স্থানীয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেই হামলার দিনই পর্যটকদের ত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন আর এক দল স্থানীয় মানুষ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৪
Share:
The heroes of Pahalgam who risked their lives to save tourists

(বাঁ দিকে) সহিস আদিল হোসেন শাহ। সাজ্জাদ আহমেদ ভাট (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

পহেলগাঁওয়ে হামলায় জঙ্গিদের বন্দুক ছিনিয়ে নিতে গিয়ে তাদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন সহিস আদিল হোসেন শাহ। তাঁর সাহসিকতার কাহিনি সে দিনের ঘটনার পর আরও কারও অজানা নেই। পর্যটককে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবনের পরোয়া করেননি আদিল। কিন্তু সে দিনের ঘটনায় আদিল একা নন, স্থানীয়দের আরও অনেকেই নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও পর্যটকদের জঙ্গিদের নাগাল থেকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

গত ২২ এপ্রিলের সেই হামলার ঘটনায় দু’টি বিপরীত চিত্র উঠে এসেছে। যখন জঙ্গিদের হামলায় সাহায্য করার জন্য এক দল স্থানীয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেই হামলার দিনই পর্যটকদের ত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন আর এক দল স্থানীয় মানুষ। তাঁদের মধ্যে সহিস আদিল ছাড়াও ছিলেন সাজ্জাদ আহমেদ ভাট। তাঁর ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে। হামলায় আহত এক পর্যটককে পিঠে নিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান তিনি। কয়েক কিলোমিটার ওই ভাবে পাহাড়ি রাস্তা ধরে ছুটেছিলেন সাজ্জাদ।

তিনি বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর দৃশ্য ছিল সে দিন। শিশু, মহিলারা বাঁচার জন্য চিৎকার করছিলেন। চার দিকে শুধু দেহ ছড়িয়ে পড়েছিল। এই দৃশ্য দেখে আর স্থির থাকতে পারিনি। কী করব, কাকে বাঁচাব, সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল। তাই যাঁকে সামনে পেয়েছি তাঁকে নিয়েই প্রাণপণে ছুটেছি। অন্য পর্যটকদের পথ দেখিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গিয়েছি।’’

Advertisement

সাজ্জাদের কথায়, ‘‘নিজের জীবনের পরোয়া করিনি। পর্যটকেরাও আমাদের পরিবারের মতো। ওঁদের উদ্ধার করা আমাদের কাজ। ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে অনেককেই হাসপাতালের দিকে নিয়ে গিয়েছিলাম। এই দিনটিকে কখনও ভুলব না। প্রতি বছর এই দিনটিকে আমরা কালাদিবস হিসাবে পালন করব।’’

টাট্টুঘোড়া সংগঠনের সভাপতি রইস আহমেদ। তিনিও সে দিনের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। রইস বলেন, ‘‘আমরা যখন বৈসরনে পৌঁছোলাম, সামনেই এক জনের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। হঠাৎই এক মহিলা ছুটতে ছুটতে এসে বললেন, আমার স্বামীকে বাঁচান। আমরা ওই মহিলাকে উপত্যকার মূল প্রবেশদ্বারের কাছে নিয়ে গিয়ে বসালাম। বাকিদেরও আশ্বস্ত করলাম যে, হাসপাতালে পৌঁছে দেব আমরা।’’

আব্দুল মজিদ। আরও এক সহিস। হামলার পর পরই তিনি সহিসদের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপে খবরটি জানান। এমনকি, স্থানীয়দের দ্রুত ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এক সাজ্জাদকে হারিয়েছি। কিন্তু পর্যটকদের বাঁচাতে আরও অনেক সাজ্জাদ নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলেন। তবে এই ঘটনা কোনও দিন ভুলব না।’’

আরও এক সহিস নিসার আহমেদ ভাট। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখনও আতঙ্কিত। পর্যটকেরা আমাদের পরিবারের মতো। ঘটনার দিন বেশ কিছু পর্যটক আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়ে পর্যটকদের কাশ্মীর থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। আমরা তা হতে দেব না।’’ এর পরই নিসার পর্যটকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা ভয় পাবেন না। কাশ্মীরে আমাদের জীবন দিয়ে আপনাদের আগলাব।’’ টাট্টু ঘোড়া সংগঠনের সভাপতি রইস আহমেদও পর্যটকদের পহেলগাঁওয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ২২ এপ্রিল বৈসরনে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ২৫ ভারতীয় এবং নেপালের এক নাগরিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement