—প্রতীকী ছবি।
যুদ্ধ বাধার পর থেকেই বিপাকে পড়েছিলেন ইউক্রেনে ডাক্তারি পাঠরত ভারতীয় পড়ুয়ারা। অনেকেই চূড়ান্ত বর্ষে এসে শেষমেশ ডাক্তার হতে পারবেন কি না, তা নিয়েও বড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের পরে তাঁরা কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখলেও ফের কার্যত অন্ধকারে ডুবে যেতে বসেছে তাঁদের ভবিষ্যৎ। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে ডাক্তারির চূড়ান্ত পরীক্ষা না দিতে পারলেও ভারতের ‘ফরেন মেডিক্যাল গ্রাজুয়েট এগজামিনেশন’ বা ‘এফএমজিই’ পাশ করতেই হবে। কিন্তু ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত ওই পরীক্ষায় ইউক্রেন থেকে আসা ভারতীয় পড়ুয়াদের সিকিভাগও পাশ করতে পারেনি।
এ দিকে, গত নভেম্বরে ভারতের মেডিক্যাল কমিশন জানিয়েছে যে এ বার থেকে ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়া থেকে ১০ বছরের মধ্যে ‘এফএমজিই’ পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। কিন্তু ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে ৭ বছর কেটে যায়। তার পর এমবিবিএস পাশ করে ছাত্রছাত্রীরা দেশে ফিরে ‘এফএমজিই’-র প্রস্তুতি নিতে আরও বছর খানেক লাগে। তার ফলে বারবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার সুযোগও থাকছে না।
প্রতি বছর জুন এবং ডিসেম্বর মাসে ‘এফএমজিই’ হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে ইউক্রেনের ১৫টি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ৩৩৩৩ জন ভারতের ‘এফএমজিই’ পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু পাশ করতে পেরেছেন তাঁদের মধ্যে মাত্র ৫২৩ জন। প্রসঙ্গত, সার্বিক ভাবেই বিদেশ থেকে এমবিবিএস পাশ করা পড়ুয়াদের এই পরীক্ষায় পাশের হার কম। ২০২২ সালের জুন মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক্তারি পাশ করা ২২০৯২ জন দেশে এই পরীক্ষায় বসেন। পাশ করেন ২৩৪৬ জন। ওই বছর ডিসেম্বরে পরীক্ষায় বসা ৩০৫৪৮ জনের মধ্যে পাশ করেন ৯৮৪০ জন। চলতি বছর ২০২৩ সালে জুন মাসের পরীক্ষায় বসেছিলেন ২৪২৫০ জন। তাতে পাশ করেছেন ২৪৭৪ জন (অর্থাৎ মাত্র ১০ শতাংশ)। ডিসেম্বরে পরীক্ষা হয়নি।
ভারত থেকে ইউক্রেনে মেডিক্যাল পড়তে যাওয়া ও পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের জাতীয় সংগঠন ‘দ্য পেরেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউক্রেনস এমবিবিএস স্টুডেন্টস’-এর সভাপতি রামবাবু গুপ্তর কথায়, ‘‘এখন ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি দিশেহারা। কারণ, ইউক্রেনে যাওয়া এবং সেখানে থেকে অফলাইন ক্লাস করা এখনও অত্যন্ত বিপজ্জনক। অধিকাংশই সেটা করতে পারছে না। ফলে সেখান থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্য দিকে, ভারতে চেষ্টা করেও তারা ‘এফএমজিই’ পাশ করতে পারছে না। অনেকেই মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিচ্ছে।’’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের নভেম্বরের আগে ইউক্রেনে ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের অন্য দেশের মেডিক্যাল কলেজে ‘ট্রান্সফার’ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সমস্যার অন্ত নেই। এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চিকিৎসক তথা বর্তমানে মেডিক্যাল পরীক্ষার্থীদের প্রাইভেট প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি একটি বেসরকারি সংগঠনের অধিকর্তা অমিয়কুমার মাইতির কথায়, ‘‘জর্জিয়া, উজবেকিস্তান বা সার্বিয়ার মতো দেশে মেডিক্যাল কলেজে ট্রান্সফার নিতে গিয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী দালাল বা এজেন্টের খপ্পরে পড়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হারাচ্ছে। আবার যে সব ছাত্রছাত্রী ২০২১ সালের নভেম্বরের পরে ইউক্রেনে মেডিক্যাল পড়তে ভর্তি হয়েছে নিয়মমতো তারা অন্য দেশের কলেজে ট্রান্সফার নিতে পারছে না। তারা ইউক্রেনেই পড়তে বাধ্য হচ্ছে।’’