সাদা গোঁফ, রিমলেস চশমায় সৌম্যদর্শন ভদ্রলোক। রাতের উড়়ানে শহরে নেমেই ব্যস্ত হয়ে পড়়লেন ভিডিও কনফারেন্সে জেলাশাসকদের ধরতে। আর তাঁকে নিয়েই শেষ বেলায় আরও ব্যস্ত হয়ে উঠল ত্রিপুরার ভোট বাজার!
ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটে বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসাবে শুক্রবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করেছে রঞ্জিত কুমার পছনন্দাকে। রাজনৈতিক শিবিরে চর্চা, অন্তিম লগ্নে লাল ত্রিপুরায় ‘বাংলা দাওয়াই’ প্রয়োগ করেছে কমিশন! দীর্ঘ দিন বাংলায় কাজ করার সুবাদে বর্ষীয়ান আইপিএস পছনন্দা ভাল করে জানেন সিপিএমের ভোট করানোর কৌশল। বাংলায় ২০১১ সালে পরিবর্তনের ভোটের সময়ে তিনিই ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। তাই শাসক দলকে চাপে রেখে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন করাতে এমন সিদ্ধান্ত। বাংলার ভোটে ঠিক যে ভাবে কেরল ক্যাডারের আইএএস আনন্দকুমারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, পছনন্দাকে ত্রিপুরায় পাঠানোও তেমন।
পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের এই আইপিএস-কে পেয়ে বিজেপি শিবির স্বভাবতই উৎফুল্ল। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব শনিবার সকালেই ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরনী কান্তের ঘরে বৈঠকে বসে পড়়েছেন বিশেষ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে। আর তাতেই অশনি সঙ্কেত দেখে দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও পি রাওয়াতের কাছে দৌড়়েছেন বৃন্দা কারাট, এস আর পিল্লাইয়েরা। তাঁদের বক্তব্য, একে তো এ ভাবে বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগই বিরল। তার উপরে তিনি বিজেপি সভাপতির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন কেন?
আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে তরনী কান্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘কিছু ফোন করার জন্য ওই সময় বিশেষ পর্যবেক্ষক আমার দফতরে ছিলেন। তখনই বিপ্লববাবু এসেছিলেন। এটা ঠিক রুদ্ধদ্বার বৈঠক নয়। আমরা বলেছি, অন্য দলগুলোও চাইলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারে।’’ তাঁর কাছে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরও একই প্রশ্ন তোলায় তরনী কান্তই ব্যবস্থা করে দেন পছনন্দার সঙ্গে বাকি রাজনৈতিক দলের সাক্ষাতের।
আরও পড়ুন: চলো পাল্টাই বনাম উল্টাই, লড়াই আজ
পছনন্দা এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী আইটিবিপি-র ডিজি। ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী এলাকায় ভোটের দায়িত্বে রয়েছে আইটিবিপি। ত্রিপুরায় চলে এসেছেন বাহিনীর অন্য শীর্ষ কর্তারাও। দুপুরে উপজাতি এলাকায় চপারে গিয়ে পর্যবেক্ষণ সেরে পছনন্দা উঠেছেন শহরের বাইরে বিএসএফের মেস-এ। পরে তরনী কান্তের পরামর্শ মেনে রাজ্য সরকারের অতিথি শালায় রাতে সময় দিয়েছেন সিপিএম নেতাদেরও। যে সাক্ষাৎ সেরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ বলেছেন, ‘‘আমরা বলেছি, প্রচারের পরেও অসমের মন্ত্রী থেকে গিয়ে ধরা পড়়ছেন! শুধু বিজেপি-র কথা শুনলে হবে? উনি আশ্বাস দিয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা করণীয়, করবেন।’’
তিনি কি তা হলে বাংলায় শেখা বিদ্যা ‘গুরুমারা’ হিসাবে প্রয়োগ করতে ত্রিপুরায় এলেন? মুখে কুলুপ পছনন্দার। শুধু বলছেন, কমিশন তাঁকে যা দায়িত্ব দিয়েছে, তা-ই পালন করবেন।