শরদ পওয়ারের দিল্লির বাংলোয় ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক। ছবি: পিটিআই।
‘ইন্ডিয়া’-র বিরোধী দলগুলি রাজ্য স্তরে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দল তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেসের মধ্যে কী ভাবে আসন সমঝোতা হবে, বা আদৌ হবে কি না, তা রাজ্য স্তরে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে।
আজ ‘ইন্ডিয়া’-র সমন্বয় কমিটি দিল্লিতে শরদ পওয়ারের বাসভবনে বৈঠক করে রাজ্য স্তরে আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈঠকের পর কমিটির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া’-র শরিক দলগুলি আলোচনা করবে এবং যত শীঘ্র সম্ভব সিদ্ধান্ত নেবে।
মুম্বই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীওয়ালরা দ্রুত আসন সমঝোতা সেরে ফেলার দাবি জানিয়েছিলেন। কেজরীওয়াল বলেছিলেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আসন সমঝোতা সেরে ফেলা হোক। মমতার দাবি ছিল, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হোক। আজ সমন্বয় কমিটিতে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া না হলেও দ্রুত সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিরোধী নেতারা আশা করছেন, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সূত্রের খবর, আজ বৈঠকে ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা বলেছেন, বিরোধী দলগুলি যে যেখানে জিতেছে, সেই জেতা আসন নিয়ে আর আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। যে সব আসন বিজেপি বা এনডিএ-র শরিকদের দখলে রয়েছে, সেখানে কে কোথায় লড়বে, তা নিয়ে আলোচনা হোক।
মুম্বইয়ে বৈঠকে সমন্বয় কমিটি গঠনের পরই ঠিক হয়েছিল, রাজ্যে রাজ্যে শরিক দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা হবে। প্রশ্ন ছিল, সমন্বয় কমিটি কি আসন সমঝোতা নিয়ে কোনও দিশা দেবে? আসন সমঝোতার সূত্র ঠিক করে দেবে?
ইন্ডিয়া-র নেতারা আজ বৈঠকের পরে জানিয়েছেন, এক-এক রাজ্যে এক-এক রকম পরিস্থিতি। পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেসের জোট থাকলেও কেরলে তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়বে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হবে, না কি শুধু কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হবে, তা রাজ্য স্তরেই ঠিক করতে হবে। ‘ইন্ডিয়া’-র সমন্বয় কমিটি থেকে তা বলে দেওয়া সম্ভব নয়। ইন্ডিয়া কোনও রাজনৈতিক দল নয় যে তার সমন্বয় কমিটি থেকে যা বলে দেওয়া হবে, তা নিচু স্তরে পালন হবে। ফলে রাজ্য স্তরেই আলোচনা হওয়া ভাল। কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্তরে আলোচনা দরকার হলে তা করা হবে।
মুম্বইয়ে আলোচনার সময় জাতগণনার প্রশ্নে নীতীশ কুমারদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতভেদ হয়েছিল। মমতার বক্তব্য, বিজেপি জাতগণনাকে ধর্মীয় রং দিতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর অসুবিধা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আজ যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উপস্থিত দলগুলি জাতগণনার দাবিতে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দিনের বৈঠকে তৃণমূলের কেউ ছিলেন না। এ বিষয়ে তৃণমূলের আপত্তির প্রশ্নে কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘যাঁরা হাজির হয়েছেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা ওঁদের সঙ্গে কথা বলব।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুপারিশ ছিল, ‘ইন্ডিয়া’-র প্রথম জনসভা হোক ভোটমুখী মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে। আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, অক্টোবরের গোড়ায় ভোপালে ‘ইন্ডিয়া’-র জনসভা হবে। তাতে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, বিজেপি সরকারের দুর্নীতি নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ আক্রমণে নামবে। মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা কমলনাথের সঙ্গে মমতার পুরনো সম্পর্ক। সেই সুবাদে মমতা ভোপালে যেতে পারেন বলে বিরোধী শিবির আশা করছে।
‘ইন্ডিয়া’-র নেতারা কিছু বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের সঞ্চালকদের নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাঁরা বিজেপির হয়ে প্রচার তো বটেই, বিদ্বেষের রাজনীতিতেও মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। সমন্বয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া’-র সংবাদমাধ্যম সংক্রান্ত গোষ্ঠী এই সব টিভি-র সঞ্চালকদের নাম চূড়ান্ত করবেন। তাঁদের অনুষ্ঠানে ‘ইন্ডিয়া’-র কোনও দল নিজেদের প্রতিনিধি বা মুখপাত্রদের পাঠাবে না।