—প্রতীকী ছবি।
পাকিস্তানের মাটিতেই অপহৃত হল কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার অন্যতম চক্রী মহিউদ্দিন আওরঙ্গজেব আলমগির। হাফিজ়াবাদ থেকে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে পাকিস্তান সরকারি ভাবে এই দাবির সত্যতা নিয়ে কিছু বলেনি। প্রথম সারির পাক সংবাদমাধ্যমগুলিও এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রকাশ করেনি।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে পুলওয়ামায় সিআরপি-র কনভয়ে জঙ্গি হানায় মৃত্যু হয় ৪০ জওয়ানের। পরে, পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ এই হামলার দায় নেয়। এর পরে ভারত সরকারি ভাবে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলে। যদিও পাকিস্তান সরকার ওই ঘটনায় তাদের কোনও রকমের যোগের কথা অস্বীকার করে এসেছে। গত বছর এপ্রিলে ওই হামলার পিছনে জইশ-ই-মহম্মদের নেতা মহিউদ্দিনকে এক জন প্রধান চক্রী বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইউএপিএ-তে অভিযুক্ত করেছে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, কাশ্মীরে সন্ত্রাস চালানোর জন্য জইশ-ই-মহম্মদের হয়ে তহবিল সংগ্রহ এবং সেই টাকা ঘুরপথে জঙ্গি সংগঠনটির একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসার বিষয়টি দেখত সে। যুক্ত ছিল জঙ্গিবাহিনীতে আফগান যুবকদের নিয়ে আসা এবং জম্মু-কাশ্মীরে বিভিন্ন হামলার ছক কষায়। জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের কাছে মক্তব আমির, মুজাহিদ ভাই-সহ আরও অনেক নামে সে পরিচিত ছিল।
বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য ডেরা হাজি গুলামে যাচ্ছিল মহিউদ্দিন। সেই সময় গাড়ি করে এসে কয়েক জন তার পথ আটকায়। জোর করে তুলে নিয়ে যায় মহিউদ্দিন ও তার এক আত্মীয়কে। অপহৃতদের সন্ধানে পাকিস্তানি সেনা এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই বেশ কিছু জায়গায় জোর তল্লাশি চালিয়েছে বলেও সূত্রের খবর। যদিও মহিউদ্দিন এবং তার আত্মীয়ের খোঁজ এখনও মেলেনি। আর তার পরেই গোয়েন্দা সূত্রের অনুমান, অপহরণের বিষয়টি সত্যি হলে পাকিস্তানের দিক থেকে তা প্রাথমিক ভাবে চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানেকর জমিতে জঙ্গিদের অবাধ ঘোরাফেরার বিষয়টি নিয়ে ভারতের অভিযোগ ফের মান্যতা পাবে। মনে করা হচ্ছে, সেই কারণে পাক সরকার এবং সেনা এখনও পর্যন্ত বিষয়টিকে প্রকাশ্যে অস্বীকার করেছে।
পুলওয়ামা হামলার পরেই কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। হামলার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কেন সেনাদের ওই ভাবে আকাশপথের বদলে সড়কপথে কনভয়ে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে প্রশ্ন তখনই ওঠে। জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন উপরাজ্যপাল তথা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের একদা ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সত্যপাল মালিক গত এপ্রিলে দাবি করেন, বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলার পরে তাঁকে চুপ করে থাকতে বলেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! মালিকের ওই দাবি নিয়ে জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। সম্প্রতি রাহুল গান্ধীকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মালিক বলেছেন, “বলছি না, যে ওরা (মোদী সরকার) পুলওয়ামা ঘটিয়েছে। কিন্তু ওদের গাফিলতিতেই যে এমন হয়েছে, তা স্পষ্ট। বিষয়টি রাজনৈতিক প্রচারে কাজে লাগিয়েছে ওরা।’’
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের মুখে হওয়া পুলওয়ামা হামলা নিয়ে তদন্ত এখনও অসমাপ্তই। তার একটা বড় কারণ, ওই ঘটনায় যুক্ত জঙ্গিদের অনেকেই এখনও অধরা। কয়েক জন সেনার গুলিতে নিহত হয়েছে। আরও একটা লোকসভা ভোট প্রায় দোরগোড়ায়। সম্প্রতি কানাডা ও আমেরিকার মাটিতে খলিস্তানি জঙ্গিদের হত্যা বা হত্যার চেষ্টায় নাম জড়িয়েছে ভারতের গোয়েন্দাদের। এই অবস্থায় পুলওয়ামার মূল চক্রীকে পাকিস্তানের মাটি থেকে অপহরণের খবর ছড়িয়ে দিতে আসরে নেমেছে বিজেপির আইটি সেল।
পুলওয়ামা হামলার পরে বালাকোটে পাক সীমান্তে আকাশপথে হামলা চালিয়ে জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছিল মোদী সরকার। যার সত্যতা নিয়ে সেই সময়েই কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিল। যদিও সেনাকে অপমান করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগে জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে লোকসভা ভোটে বিপুল জয় পায় বিজেপি। যার পরে এই সংক্রান্ত বিতর্ক অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ গত জানুয়ারিতে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রায় জম্মুতে গিয়ে ফের প্রশ্নগুলি তোলেন।