গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
স্যুটকেসের ভিতরে এক তরুণীর মুণ্ডহীন দেহ। তিন টুকরো করা। ভোরবেলায় এমন স্যুটকেস উদ্ধারের পর হন্যে হয়ে অপরাধীর খোঁজ শুরু করেন তদন্তকারীরা। তবে কোনও সূত্রই মিলছিল না। শেষমেশ ওই স্যুটকেসের ভিতরের দুর্গন্ধের সূত্র ধরেই অপরাধের রহস্যভেদ করল পুলিশ। মাত্র ৩০ ঘণ্টার মধ্যেই!
পুলিশের দাবি, ওই তরুণীর খুনি অন্য কেউ নন, তাঁরই বাবা অরবিন্দ তিওয়ারি! মেয়েকে খুন করে টুকরো টুকরো করে কেটে স্যুটকেসে ভরে ফেলে পালিয়েছেন তিনি। সোমবার ঠাণের টিটবালার বাসিন্দা বছর সাতচল্লিশের অরবিন্দকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মেয়ে প্রিন্সির সঙ্গে তাঁর প্রেমিকের মেলামেশা পছন্দ ছিল না অরবিন্দের। বারণ করা সত্ত্বেও প্রেমিকের সঙ্গ ছাড়তে নারাজ ছিলেন। তাই মেয়েকে খুন করেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার ভোরে কল্যাণ রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে একটি অটোর ভিতর থেকে ওই স্যুটকেসটি উদ্ধার করা হয়। সেখানকার অটোচালকেরাই স্যুটকেসের ব্যাপারে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক প্রকাশ লোন্ডে বলেন, ‘‘স্যুটকেসের ভিতর এক তরুণীর দেহ উদ্ধার করি আমরা। মাথা নেই। শুধুমাত্র কোমরের নীচের অংশটি রয়েছে। দেহটি তিন টুকরো করা।’’
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ করালেন অমিত শাহ
ঘটনার তদন্তে নেমে ওই এলাকার অটোচালকদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। সে সময় এক অটোচালক জানান, ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ তাঁর অটোতে এক ব্যক্তি ওই স্যুটকেস নিয়ে উঠেছিলেন। তা থেকে দুর্গন্ধ বার হচ্ছিল। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে কোনও উত্তর না দিয়েই অটোতে স্যুটকেস রেখে নেমে যান তিনি। এর পর পুলিশকে খবর দেন আশপাশের অটোচালকেরা। এর পর তদন্তে নেমে কল্যাণ-সহ আশপাশের বিভিন্ন স্টেশন এলাকার সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ। তাতে দেখা যায়, ওই একই ধরনের স্যুটকেস নিয়ে ট্রেনে উঠছেন দুই জন ব্যক্তি। তবে তার মধ্যে লাল শার্ট পরা এক ব্যক্তি স্টেশনের ধারে একটি শৌচালয়ে ঢুকছেন। কিন্তু, সেখান থেকে বার হচ্ছেন সাদা শার্ট পরে। তাতেই সন্দেহ হয় পুলিশের। সিসিটিভি ফুটেজে আরও দেখা যায়, লাল শার্ট পরা অবস্থায় একটি অটোতে উঠছেন ওই ব্যক্তি। ফুটেজে ওই ব্যক্তির চেহারা দেখেই এর পর স্থানীয় এলাকায় তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। শেষমেশ স্যুটকেস উদ্ধারের প্রায় ৩০ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশের জালে পড়েন অরবিন্দ। মেয়েকে খুনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘সজ্জন মুসলিমরা এলেও ভাবা হবে’
পুলিশ জানিয়েছে, মুম্বইয়ের অন্ধেরি এলাকায় একটি লজিস্টিক ফার্মের কর্মী অরবিন্দ টিটবালায় একাই থাকতেন। তাঁর স্ত্রী এবং চার মেয়ে থাকেন উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে। তবে মাসচারেক আগে রোজগারের সন্ধানে সেখান থেকে মুম্বই আসেন অরবিন্দের ২২ বছরের মেয়ে প্রিন্সি। সেখানে একটি সংস্থার কাজ করার সময়ই সম্পর্ক গড়ে ওঠে এক সহকর্মীর সঙ্গে। তবে সে সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি অরবিন্দ। পুলিশের দাবি, বারণ সত্ত্বেও কথা না শোনায় মেয়েকে খুনের পরিকল্পনা করেন অরবিন্দ। প্রাথমিক ভাবে অনুমান স্যুটকেস উদ্ধারের দিন দুয়েক আগেই মেয়েকে খুন করেন তিনি। তবে এখনও পর্য়ন্ত প্রিন্সির দেহের বাকি অংশ এবং খুনের অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে মাত্র ৩০ ঘণ্টার মধ্যে এই অপরাধের রহস্যভেদ করার জন্য তদন্তকারীদের পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ঠাণের পুলিশ কমিশনার বিবেক ফণসালকর।