হামলা চালাতে পারে উড়ুক্কু যান, সতর্কতা জারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের

টক-মিষ্টি সস, খাঁটি ইতালীয় মোৎসারেল্লা চিজ ও বেসিল পাতা কুঁচি দিয়ে তৈরি মার্গারিতা পিৎজা নিয়ে রওনা দিল চালকহীন উড়ুক্কু যান। প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চতায় উড়ে, দশ মিনিটে দেড় কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছল ২১ তলা একটি বাড়ির ছাদে। খদ্দেরকে খাবার পৌঁছে দিয়ে রিমোট-চালিত ওই যান বায়ুপথে ফিরে গেল পিৎজার দোকানে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০৪:০৫
Share:

টক-মিষ্টি সস, খাঁটি ইতালীয় মোৎসারেল্লা চিজ ও বেসিল পাতা কুঁচি দিয়ে তৈরি মার্গারিতা পিৎজা নিয়ে রওনা দিল চালকহীন উড়ুক্কু যান। প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চতায় উড়ে, দশ মিনিটে দেড় কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছল ২১ তলা একটি বাড়ির ছাদে। খদ্দেরকে খাবার পৌঁছে দিয়ে রিমোট-চালিত ওই যান বায়ুপথে ফিরে গেল পিৎজার দোকানে।

Advertisement

কিন্তু সসে-চিজে মাখামাখি সুস্বাদু পিৎজার বদলে যদি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, সালফার ও বল বিয়ারিং দিয়ে তৈরি ভয়ঙ্কর আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ওই উড়ুক্কু যানের সঙ্গে বেঁধে দিয়ে সেটি আছড়ে ফেলা হতো ভিড়ে ঠাসা কোনও বাজার বা জনসভায়? কিংবা ভিআইপি বা গণ্যমান্য উপস্থিত আছেন, এমন কোনও সভাস্থলে?

এই আশঙ্কাতেই প্রমাদ গুনছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মুম্বইয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে চালকহীন উড়ন্ত যান অর্থাৎ আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি) দিয়ে পিৎজা পৌঁছনোর বিষয়টি জানার পরই সম্প্রতি প্রতিটি রাজ্যকে মন্ত্রক একটি সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। এই ব্যাপারে রাজ্যগুলিকে একগুচ্ছ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

Advertisement

মন্ত্রকের বক্তব্য, গত ১১ মে মুম্বইয়ের লোয়ার পারেল থেকে রওনা হয়ে ওরলির বহুতলে পিৎজা পৌঁছে দেওয়ার ওই ঘটনা দেশ জুড়ে ভিআইপি-দের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অবশ্য কোনও জায়গা বা অনুষ্ঠানের ছবি তুলে সরাসরি সম্প্রচারের জন্য পুলিশ ও সংবাদমাধ্যম তো বটেই, ব্যক্তিবিশেষও এখন ইউএভি ব্যবহার করছে। এই ধরনের উড়ুক্কু যান বাজারে সহজলভ্য। দামও অনেকের নাগালের মধ্যে। ভারতের প্রায় সব ক’টি বড় বড় শহরে বিক্রি হয় এই উড়ুক্কু যান। আবার অনলাইনে বিদেশ থেকেও কেনা যায় ইউএভি। ক্যামেরা বা পিৎজার পরিবর্তে সেগুলিকে আইইডি-র বাহক হিসেবে খাড়া করে হামলা চালালে জঙ্গিরা খরচও বাঁচাতে পারবে বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র এক অফিসারের বক্তব্য, এই ধরনের ইউএভি-কে আইইডি-র বাহক হিসেবে তৈরি করলে সেটি প্রথাগত নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ধোঁকা দিয়ে আত্মঘাতী হানার মতোই জঙ্গি হামলা চালাতে পারে। “বিপদটা তাই মারাত্মক”মন্তব্য ওই অফিসারের।

চালকহীন উড়ুক্কু যান মুম্বইয়ে ১৩ ইঞ্চির যে পিৎজাটি পৌঁছে দিয়েছিল, তার ওজন ছিল আধ কেজি। আইবি-র বক্তব্য, দু’কেজি ওজনও বহন করতে পারে ইউএভি। দু’কেজি বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি আইইডি দিয়ে হামলার প্রভাব ব্যাপক হবে। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরিতে ১৯৯৮-এ উদ্ধার করা হয় দু’টি ইউএভি, যেগুলির একেকটি দু’কেজি ভার বহন করতে পারে। তবে এর আট বছর পরে, ২০০৬-এর ১৩ অগস্ট জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লার ছাড়া যে দু’টি ড্রোন ইজরায়েলি সেনা গুলি করে নামিয়েছিল, সেগুলির একটিতে আটকানো ছিল ৩০ কেজি বিস্ফোরক!

২০০৯-এর ২৯ এপ্রিল দিল্লিতে পার্লামেন্ট হাউস অ্যানেক্স বা সংসদীয় সৌধের মধ্যে একটি চিনা খেলনা হেলিকপ্টার ঢুকে পড়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। তার পরের বছর নেদারল্যান্ডসের সংসদ ভবনে একটি ইউএভি ভেঙে পড়ে একই রকম আতঙ্ক ছড়ায়। ৯/১১-র দশ বছর পূর্তিতে বিস্ফোরক বহনকারী ইউএভি দিয়ে পেন্টাগন ও ওয়াশিংটনে হামলা চালানোর ছক কষার অভিযোগে ম্যাসাচুসেট্স-এর ব্যক্তিকে ২০১১-র সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার করা হয়।

ভারতে এই ধরনের ইউএভি-হামলা ঠেকাতে কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, কিন্তু সেই সঙ্গে বিপজ্জনক উড়ুক্কু যান আটকাতে দরকার বৈদ্যুতিন কিছু ব্যবস্থা।

এক, নিরাপত্তার বেষ্টনীতে মোড়া কোনও নির্দিষ্ট জায়গার কাছাকাছি এই ধরনের উড়ুক্কু যান চলে আসছে কি না, সেটা আগাম জানতে ‘অ্যান্টি ইউএভি রেডার সিস্টেম’-এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। দুই, এই ড্রোনগুলি সাধারণত ৫০০ মিটারের বেশি উঁচুতে উঠতে পারে না, তাই ওই উচ্চতা পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট জায়গার আশপাশে শক্তিশালী ক্যামেরা দিয়ে বায়ুপথে নজরদারি চালানো যেতে পারে। এই ব্যবস্থায় বিপদঘণ্টিও রাখা দরকার। তিন, এই উড়ুক্কু যানগুলি রিমোট-চালিত হওয়ায় বিপদ ঠেকাতে জ্যামারও ব্যবহার করা যায়।

এর পাশাপাশি সাধারণ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রথমত, ভিআইপি-র সভাস্থল ও তার আশপাশে যেন ‘নো ফ্লাই জোন’-র নিয়মনীতি কঠোর ভাবে মানা হয়। অর্থাৎ এই ধরনের উড়ন্ত কোনও বস্তুর চলাচল ওই জায়গায় নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, লাইসেন্স নেই এমন কোনও লোক যেন ফ্লাইং ক্লাব বা গ্লাইডিং ক্লাবে ঢুকে ওড়ার যান ব্যবহার করতে না পারেন। তৃতীয়ত, নজরদারির জন্য ভিআইপি-র অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি হবে এবং প্রচুর আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তা ছাড়া, চালকহীন উড়ুক্কু যানের বিক্রেতাদের সতর্ক করবে পুলিশ, যাতে তাঁরা ক্রেতাদের পরিচয় যাচাই করে তবেই সরঞ্জাম বিক্রি করেন। বিক্রেতারা সেটা করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement