‘আমার ছবি নেই তো?’ সংসদের তৃণমূল বেঞ্চে তখন চোখেমুখে টেনশন

সংসদ এবং প্রেস ক্লাব-- রাস্তার এ পার আর ও পার। আজ অন্যান্য দিনের মতোই ধোপধুরস্ত পোশাকে যখন লোকসভায় উপস্থিত সৌগত রায়, সুলতান অহমেদরা-- তখন প্রেস ক্লাবে তাদের বিরুদ্ধে বোমা ফাটাচ্ছে একটি স্টিং অপারেশন। যার খবর ও পার থেকে এ পারে আসতে স্বাভাবিক ভাবেই সময় বেশি লাগেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ২০:৪৯
Share:

সংসদে সৌগত রায়, তাপস পাল এবং সুলতান আহমদ। ছবি: প্রেম সিংহ।

সংসদ এবং প্রেস ক্লাব-- রাস্তার এ পার আর ও পার।

Advertisement

আজ অন্যান্য দিনের মতোই ধোপধুরস্ত পোশাকে যখন লোকসভায় উপস্থিত সৌগত রায়, সুলতান অহমেদরা-- তখন প্রেস ক্লাবে তাদের বিরুদ্ধে বোমা ফাটাচ্ছে একটি স্টিং অপারেশন। যার খবর ও পার থেকে এ পারে আসতে স্বাভাবিক ভাবেই সময় বেশি লাগেনি। প্রেস ক্লাব থেকে সংসদে সাংবাদিকেরা পৌঁছে যাওয়ার আগেই, কলকাতা থেকে সংশ্লিষ্ট নেতাদের উদ্দেশ্যে মোবাইলে এসওএস-- মৌনব্রত অবলম্বন করতে হবে। এ নিয়ে যেন ভিন্ন স্বর না শোনা যায়। যা বলার এক সুরেই বলবে দল।

এই আকস্মিক বার্তায় দৃশ্যতই কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায় তৃণমূল বেঞ্চ। তখনও পর্যন্ত ভিডিওটি সম্পর্কে কোনও সম্যক ধারণাই ছিল না তাঁদের। সৌগত রায়কে তাই দেখা যায় দ্রুত অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসতে। সাংবাদিকদের কাছ থেকেই প্রথমে গোটা ভিডিও পর্ব সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমাকে কলকাতা থেকে ফোন করে কথা বলতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। যা বলার দল বলবে।’’ এটুকু বলেই সংসদের মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাতে শুরু করেন সৌগতবাবু। যা দেখে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শরদ পওয়ারের মেয়ে তথা এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বলে ওঠেন, ‘‘আরে একে তো স্টিং অপারেশন হয়েছে। তারপর সংসদে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন! এরপর তো ছবি উঠে যাবে।’’ বুঝতে পেরেই মুখ ঘুরিয়ে ফেলেন সৌগতবাবু। ততক্ষণে অবশ্য ক্যামেরাবন্দি হয়ে গিয়েছেন সৌগতবাবু। হাতে গরম ছবি, আর স্টিং অপারেশনের সম্পর্কে বাইট নেওয়ার জন্য সৌগত রায়ের দিকে ছুটে আসতে শুরু করে জাতীয় সংবাদমাধ্যম। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জানেন আপনার বিরুদ্ধে স্টিং অপারেশন হয়েছে। শুনেই সৌগতবাবু বলেন, ‘‘হ্যাঁ শুনলাম, স্টিং হয়েছে।’’ সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরছে অথচ গাড়ি আসছে না, পরিস্থিতি দেখে কিছুটা অস্থির সৌগতবাবু সুপ্রিয়াকে শেষে বলে বসেন, ‘‘তুমি কি তোমার গাড়িতে আমায় নেবে?’’ সুপ্রিয়া ঘাড় হেলাতেই সিগারেট হাতে গাড়িতে উঠে পড়েন দমদমের ওই সাংসদ।

Advertisement

এরপর স্টিং অপারেশনের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে সাংসদদের মধ্যে। মূলত বাংলার সাংসদেরা সাংবাদিকদের ডেকে প্রশ্ন করতে থাকেন, কাদের কাদের নাম রয়েছে। নাম নেই জেনে কিছুটা স্বস্তির ছাপ মুখে সংসদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসছিলেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে সেই সময়েই সংসদের মূল দরজায় দাঁড়িয়ে মশগুল হয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি ও কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য। এক সময়কার যুযুধান ও বর্তমানে জোট সঙ্গীর দুই নেতাকে দেখে কল্যাণ বলে ওঠেন, ‘‘নতুন প্রেমিকা! নতুন প্রেমিকা!’’ কল্যাণকে দেখেই অন্য দিকে হাঁটা দেন সীতারাম। কিন্তু হেসে ফেলেন প্রদীপ ভট্টচার্য। কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে পরিচিত দু’-এক জনের সঙ্গে কথা বলে গাড়িতে উঠে যান তিনিও। পরে ঘনিষ্ঠ মহলে কল্যাণ বলেন, মাত্র পাঁচ লক্ষের জন্য এই কাণ্ড। কী খারাপ ব্যাপার।’’ পরে প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে ইস্তফা দেওয়া। নির্বাচন কমিশন যাতে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে তার জন্য কংগ্রেস কমিশনের দ্বারস্থ হবে।’’

অভিযুক্ত আরেক সাংসদ সুলতান অহমেদকেও আজ কিছুটা নীরবেই ঘুরতে দেখা গিয়েছে সংসদে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমি এই নিয়ে নিজে থেকে কিছু বলছি না। কারণ আমি একরকম বলব, দল অন্য লাইন নেবে। দু’টোর মধ্যে তফাৎ হয়ে যাবে। যা বলার একটা লাইনই থাক।’’

আরও পড়ুন:
নারদের স্টিং অপারেশন, ঘুষ বিতর্কে জড়ালেন তৃণমূলের ১১ শীর্ষ নেতা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement