নতুন বছরের শুরুতেও অশান্তি অব্যাহত মণিপুরে। মঙ্গলবার বেশি রাতের দিকে পশ্চিম ইম্ফল জেলায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। ছবি: সংগৃহীত।
নতুন বছরের প্রথম দিনও উত্তপ্ত মণিপুর। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে অশান্তির জন্য মঙ্গলবারই ক্ষমা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ। সব জনজাতিকে অনুরোধ করেছেন, যা হয়েছে ভুলে যাওয়ার জন্য। আশা করেছেন, নতুন বছরে শান্তি ফিরবে। মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন আদৌ ফলপ্রসূ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল বুধবারের ঘটনা।
বুধবার বেশি রাতের দিকে মণিপুরের পশ্চিম ইম্ফল জেলার কদংবন্দ অঞ্চলে হামলা চালায় কয়েক জন জঙ্গি। সূত্রের খবর, তাদের সঙ্গে ছিল অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে জঙ্গিরা। হয় বোমাবাজিও। আচমকা হামলার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যান বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১টা নাগাদ কদংবন্দে পাহাড়ের উঁচু জায়গা থেকে হামলা শুরু করে জঙ্গিরা। পাহাড়ের নীচের দিকে থাকা গ্রাম লক্ষ্য করে গুলি এবং বোমা ছুড়তে থাকে তারা। গ্রামে মোতায়েন থাকা স্বেচ্ছাসেবক দল সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে। খবর দেওয়া হয় নিরাপত্তা বাহিনীকেও। পুলিশ জানিয়েছে, দ্রুত বাহিনী পৌঁছে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলায় কোনও হতাহতের খবর নেই।
ঘটনাচক্রে মঙ্গলবারই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ২০২৩ সালের মে মাস থেকে চলতে থাকা অশান্তির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন রাজ্যবাসীর কাছে। তিনি বলেন, ‘‘এই পুরো বছরটি দুর্ভাগ্যজনক ছিল। গত বছরের ৩ মে থেকে আজ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে, তার জন্য আমি রাজ্যের জনগণের কাছে দুঃখপ্রকাশ করছি। বহু মানুষ প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। অনেককে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু গত তিন-চার মাসের পরিস্থিতি দেখার পর আমার বিশ্বাস, ২০২৫ সালে রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী আশার কথা বললেও বাস্তব চিত্র বলছে, নতুন বছরেও অশান্তি, আতঙ্ক অব্যাহত মণিপুরে। মঙ্গলবার নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয়দের একপ্রস্ত সংঘর্ষের পর কার্ফু জারি হয় কংপোকপি জেলার সাইকুলে। এর পরে মঙ্গলবার বেশি রাতের দিকেও অশান্তি ছড়াল পশ্চিম ইম্ফলে। পাহাড়ের উপর থেকে গ্রাম লক্ষ্য করে বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে।
বস্তুত, কংপোকপি এবং পশ্চিম ইম্ফল— দুই জেলাতেই মাঝেমধ্যেই অশান্তি ছড়ানোর খবর পাওয়া যায়। নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় পুলিশের তরফে অবশ্য কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে রাজ্য জুড়ে। মঙ্গলবার মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী জানান, পশ্চিম ইম্ফল, পূর্ব ইম্ফল, কংপোকপি ও চুরাচাঁদপুর জেলা মিলিয়ে দু’হাজারেরও বেশি বাস্তুচ্যুত পরিবারকে নিজেদের ভিটেয় পুনর্বাসিত করা হয়েছে। গত কয়েক মাসে গোটা রাজ্য জুড়ে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ছ’হাজারেরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ।