#tenyearchallenge

#টেনইয়ারচ্যালেঞ্জ: নিছক নির্দোষ খেলা না পিছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র? বিশ্বজুড়ে বাড়ছে সংশয়

সত্যিই কি এটা কোনও নির্দোষ কোনও খেলা না এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে কোনও বড়সড় ষড়যন্ত্র? আমাদের অজান্তেই কি কোনও ভাবে কোটি কোটি মানুষের দেওয়া ওই ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে কোনও ব্যবসায়িক লাভের জন্য? আমাদের উপর নজরদারি করতেই কি ঘুরপথে সংগ্রহ করা হচ্ছে ওই বিপুল পরিমাণ তথ্য?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:৫৭
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের ‘#টেনইয়ারচ্যালেঞ্জ’ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গোটা বিশ্বে রীতিমত উন্মাদনা চলছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। তামাম দুনিয়ার সেলেব থেকে শুরু করে আম আদমি ব্যস্ত নিজের দশ বছর আগে এবং ঠিক এখনকার নিজের ছবি পাশাপাশি ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করতে।

Advertisement

আপাত ভাবে নিছক মজার একটা খেলা। ঠিক দশ বছর আগের আমি আর এখনকার আমিকে ভার্চুয়াল পৃথিবীর কাছে তুলে ধরা। একদম নির্দোষ একটি খেলা। কিন্তু সেই নির্দোষ পোস্ট ঘিরেই এবার শুরু হয়ে গিয়েছে সংশয়ের বাতাবরণ।

সত্যিই কি এটা কোনও নির্দোষ কোনও খেলা না এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে কোনও বড়সড় ষড়যন্ত্র? আমাদের অজান্তেই কি কোনও ভাবে কোটি কোটি মানুষের দেওয়া ওই ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে কোনও ব্যবসায়িক লাভের জন্য? আমাদের উপর নজরদারি করতেই কি ঘুরপথে সংগ্রহ করা হচ্ছে ওই বিপুল পরিমাণ তথ্য?

Advertisement

প্রশ্নটা ওঠেনি যতক্ষণ না মার্কিন লেখিকা কেট টুইটারে সেই সংশয়ের কথা প্রকাশ করেন। তিনি তাঁর টুইটার হ্যান্ডলে লেখেন,“দশ বছর আগে হলে আমিও হয়তো এই মিমের খেলায় অংশ নিতাম। কিন্তু দশ বছর পরে আমাকে চিন্তা করতে হচ্ছে, কী ভাবে ওই বিপুল তথ্যের খনি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাওয়া মানুষের মুখ চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তিকে(ফেস রেকগজিশন অ্যালগরিদম)এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: #টেনইয়ারচ্যালেঞ্জ, গত দশ বছরে কতটা পাল্টে গেল ভারতীয় ক্রিকেট

জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ কেটের করা ওই টুইট কয়েক দিনের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। সারা বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের একটা বড় অংশের মধ্যেই তৈরি হয় সন্দেহ এবং সংশয়। ‘টেক হিউম্যানিস্ট’ বইয়ের লেখিকা কেটের বিষয়, কী ভাবে প্রযুক্তিকে ব্যাবসা এবং মানুষের জীবনের উন্নতির জন্য ব্যাবহার করা যায়।

কেটের সংশয়টা যে একটুও অমূলক নয় তা মার্কো ডি’মেলোর বক্তব্যে আরও স্পষ্ট। মার্কো মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারাকরীদের অনলাইন নিরাপত্তা প্রদানকারী বিভিন্ন সিকিউরিটি অ্যাপসের আন্তর্জাতিক কোম্পনি পি-সেফের কর্ণধার। তিনি তাঁর ব্লগে জানিয়েছেন, “বর্তমানে অনেক ছবির মধ্যে থেকে একটি ছবিকে চিহ্নিত করার অর্থাৎ কৃত্রিম মেধার মাধ্যমে কোনও মুখকে চিহ্নিতকরণের প্রযুক্তি আছে। কিন্ত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে পরিবর্তন হয় মুখে তা চিহ্নিত করতে দশ বছর আগের এবং পরের ছবির ওই বিপুল তথ্য ভান্ডার প্রযুক্তিকে আরও নিঁখুত বানাতে সাহায্য করবে।” তিনি সেই সঙ্গে উল্লেখ করেছেন ওই বিপুল তথ্যের ভান্ডার কার হাতে পড়ছে তার উপর নির্ভর করছে ঝুঁকির পরিমাণ। অর্থাৎ কেটের আশঙ্কাকে উড়িয়ে না দিয়ে অনেকটাই সেই সংশয়েই সিলমোহর দিয়েছেন মার্কো।

গোটা বিশ্বজুড়ে এই সংশয় বাড়ার কারণ আছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা প্রকাশ্যে আসার পর এটা স্পষ্ট যে জাকারবার্গের কোম্পানি থেকে মানুষের তথ্য ‘চুরি’ যাচ্ছে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে প্রকাশ্যে আসে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি। জানা যায় ফেসবুক থেকে ফাঁস হওয়া তথ্য কাজে লাগিয়েছে ওই সংস্থা। তারা আমেরিকা ভারত মাল্টা মেক্সিকোর মত বিভিন্ন দেশে সেখানকার নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ভোটে ব্যবহার করার জন্য বিক্রি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে। ওই বিতর্কের জেরে মার্কিন সেনেটের সামনেও জবাবদিহি করতে হয় জাকারবার্গকে।

#10yearchallenge seems fun...love how life makes us all go through so many phases... even in the way we look... I have no reason to complain... life has been awesome in these last 10 years... looking forward always ❤️ #loveyourself #grateful #lovelife ( 📸 Race to my new film #Aadat)

A post shared by bipashabasusinghgrover (@bipashabasu) on

কেট নিজেও এর পিছনে এ রকমই বড়সড় যড়যন্ত্রের ইঙ্গিতই দিয়েছেন। ভারতের কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম (সার্ট)-র এক বিশেষজ্ঞ স্বীকার করেন, “সারা পৃথিবী জুড়ে ভালো ফেস রেকগনিশন সফ্টওয়্যারের আকাশ ছোঁয়া চাহিদা। কারণ ভবিষ্যতে আইন রক্ষকদের কাছে অপরাধী চিহ্নিত করতে ওই প্রযুক্তি সবচেয়ে কার্যকরী হবে।” সেই সঙ্গে গোয়েন্দারা স্বীকার করেন সার্বিক নজরদারির জন্যও ওই প্রযুক্তি হবে সবচেয়ে কার্যকর।

আরও পড়ুন: থ্রোব্যাক টলিউড: কয়েক বছর আগে কেমন ছিলেন মিমি, জিত্, রাইমারা?

#10yearchallenge #23to33 from DELHI 6 to ek Ladki Ko Dekha toh AISA Laga.. do you think I got dads genes??? @anilskapoor

A post shared by SonamKAhuja (@sonamkapoor) on

আর এখানেই ভারতের প্রেক্ষিতে ভয় পাচ্ছেন বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের মত সাইবার বিশেষজ্ঞরা। বিভাস বলেন, “এমনিতেই ফেসবুকে বিভিন্ন থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়। এটা তো সরাসরি ফেসবুকই সেই তথ্য ভান্ডার তৈরি করছে। ওই তথ্য যে অন্য কারওর কাছে ফাঁস হবে না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। আর সেটা কার্যত মৌলিক অধিকারের উপর আঘাত। এখনও তথ্য রক্ষা বা ডেটা প্রোটেকশন আইন ভারতে হয়নি। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কারওর হাতে চলে যাওয়া মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে ব্যক্তির আরও ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব।” বিভাস আরও মনে করিয়ে দেন যে, ভারতে আধার কার্ডেও ওই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়েছে। তাই ভুল লোকের হাতে ওই তথ্য ভাণ্ডার পৌঁছলে বড়সড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। যদিও ইতিমধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ওই #টেনইয়ারচ্যালেঞ্জের দায় নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন। তাঁরা টুইট করে জানিয়েছেন, ওই চ্যালেঞ্জ ফেসবুক কর্তৃপক্ষের তৈরি করা নয়, বরং কোনও ফেসবুক ব্যবহারকারীর তৈরি করা যা ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।

তবে তার পরও সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ওই চ্যালেঞ্জের নামে গোটা বিশ্বের প্রায় দু’শো কোটি ফেসবুক ব্যাবহাকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ঘুরপথে হাতিয়ে নিচ্ছে ফেসবুক — এমন আশঙ্কা ক্রমাগত ভাইরাল হচ্ছে। বাড়ছে সংশয়। অনেকেই বড় ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement