NITI Aayog Meet

ভিন্ন কারণে নীতি আয়োগের বৈঠকে গরহাজির দশ মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি বলল ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’

মুখ্যমন্ত্রীদের ‘গরহাজিরা’ প্রসঙ্গে মুখ খুলে বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে খোঁচা দেয় বিজেপি। বিরোধীদের এই রাজনীতিতে উন্নয়নের উদ্যোগ ব্যাহত হবে বলে মত তাদের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ ২১:২৫
Share:

নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। ফাইল চিত্র।

নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেছে ২০টি বিরোধী দল। সেই অনুষ্ঠানের ঠিক আগের দিন, শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকেও কেন্দ্র এবং অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ‘অভাব’ প্রকট হয়ে উঠল। আগেই জানা গিয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না। শনিবার রাতে আম আদমি পার্টি (আপ)-র দুই মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং ভগবন্ত মানও জানিয়ে দেন যে, নীতি আয়োগের বৈঠক ‘বয়কট’ করছেন তাঁরা। পরে বয়কটকারী মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকায় যুক্ত হয় নীতীশ কুমার, কে চন্দ্রশেখর রাও, এমকে স্ট্যালিন, পিনারাই বিজয়ন, অশোক গহলৌতের নামও। তবে নীতি আয়োগের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রত্যেকে। বিজেপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রেখে চলা, আবার বিরোধী দলগুলির একাংশের অভিযোগ অনুসারে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করে চলা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীনও শনিবারের বৈঠকে গরহাজির ছিলেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের কাজে ‘ব্যস্ত’ থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি কর্নাটকের নতুন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীদের ‘গরহাজিরা’ প্রসঙ্গে মুখ খুলে বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং ‘জনবিরোধী’ রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। শনিবার দুপুরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা বৈঠকটি শনিবার এখানে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এত জন মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে অংশগ্রহণ না করার মানে হল, তাঁদের রাজ্যের বক্তব্য শোনা যাবে না।’’ বিরোধীদের এই রাজনীতিতে উন্নয়নের উদ্যোগ ব্যাহত হবে জানিয়ে রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং জনবিরোধী।’’ মমতা-সহ বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দেখব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করে আপনারা কত দূর যান?’’

বয়কটের নেপথ্যে প্রতিবাদ

Advertisement

অর্ডিন্যান্স-বিতর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দিল্লির আপ-সরকারের বিরোধ চলছেই। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অবমাননা করার অভিযোগ তুলে দিল্লির আপ সরকারের বক্তব্য, রাজ্য প্রশাসনের কাজে নাক গলানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্র। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়েছিলেন কেজরীওয়াল। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে ‘মস্করা’ করার অভিযোগ তোলেন। আর এক আপ শাসিত রাজ্য পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্তও বৈঠক বয়কট করেন। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের বকেয়া ৩৬০০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েই তিনি ওই বৈঠকে যাবেন না। ডিএমকে-র মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও একই পথে হাঁটার কথা ঘোষণা করেন।

বৈঠকে নেই বাংলাও

প্রথমে জানা গিয়েছিল, ২৭ মে নীতি আয়োগের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। গত ১৫ মে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি, নীতি আয়োগের বৈঠক নিয়ে ক্ষোভের কথাও জানিয়েছিলেন মমতা। রাজ্যের দাবিদাওয়া আদায়ে বৈঠকে যোগ দেবেন, এ কথা জানিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “সবার শেষে, সূর্যাস্তের পর আমায় বলতে দেবে। ওদের কাছে সূর্যোদয়ের আগে আমার মুখ দেখা যায় না।” নবান্ন সূত্রে জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য নীতি আয়োগের বৈঠকে যাবেন, তা এক প্রকার স্থির হয়ে গিয়েছিল। সেই মতো কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি চিঠি পাঠিয়ে প্রতিনিধিদের নামও জানানো হয়। কিন্তু জবাবি চিঠিতে নাকি কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত থাকলেই ‘ভাল’। কেন্দ্র যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসাবে কাউকে চাইছে না, তা ওই চিঠিতেই স্পষ্ট হয়ে যায় বলে মনে করছে নবান্ন। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, “বহু প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। বৈঠকে এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলতাম জেনেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার চাইছে না আমরা দিল্লি যাই।”

অনুপস্থিতির অন্যান্য কারণ

মমতার মতোই নীতি আয়োগের বৈঠকে গরহাজির ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এব‌ং তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। দিল্লিতে বৈঠক যখন চলছে, তখন নিজের রাজ্যে কেজরীওয়ালকে পাশে বসিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছিলেন রাও। ব্যক্তিগত কাজ থাকার কারণে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে জানান কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। শারীরিক অসুস্থতার কথা জানান রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের কারণে উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন কর্নাটকের নতুন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও।

উঠল অধিকারের দাবি

বৈঠকে কংগ্রেস শাসিত ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল রাজ্যগুলির অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেন। নিজের মতামত জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করব যে, আমাদের অধিকারগুলিকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিক তারা। সম্পদের ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হোক।” ‘বয়কটকারী’ মুখ্যমন্ত্রীদের বার্তা বৈঠকে বঘেল পেশ করেছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

বিরোধীদের তোপ বিজেপির

বিরোধীদের বয়কটের এই রাজনীতিতে উন্নয়নের উদ্যোগ ব্যাহত হবে বলে জানিয়ে বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং জনবিরোধী।’’ মমতা-সহ বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দেখব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করে আপনারা কত দূর যান?’’

বয়কটে একজোট বিরোধীরা

নীতি আয়োগের বৈঠক ‘বয়কট’ বিরোধী দলগুলিকে আরও কাছাকাছি আনল বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠান বয়কটে দূরত্ব ভুলে কাছাকাছি এসেছিল ১৯টি বিরোধী দল। নীতি আয়োগের শনিবারের বৈঠকও কাছাকাছি এনে দিল বিরোধী দলগুলিকে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য যে প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে তারও নজির হয়ে রইল এই ঘটনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement