sonia gandhi

ইন্দিরা-রাহুলের পথে কি দক্ষিণে সনিয়াও, ভাবনা তেলঙ্গানার আসন-প্রস্তাবে

মাসদুয়েক আগে তেলঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য পেয়ে দক্ষিণের ওই রাজ্যে সরকার গড়েছে কংগ্রেস।

Advertisement

 সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫৯
Share:

সনিয়া গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

অমেঠি থেকে রাহুল গান্ধী আগেই সরে গিয়েছেন কেরলের ওয়েনাড়ে। এ বার সনিয়া গান্ধীও কি উত্তর ছেড়ে দক্ষিণমুখী হবেন? তাদের রাজ্য থেকে আসন্ন লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সংসদীয় দলের সভানেত্রী সনিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রস্তাব ভাবিয়ে তুলেছে এআইসিসি নেতৃত্বকে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এমন প্রস্তাব এক কথায় উড়িয়ে দিতে পারছেন না কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। আবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মাথায় রাখতে হচ্ছে ‘নেতিবাচক’ বার্তার সম্ভাবনাও!

Advertisement

মাসদুয়েক আগে তেলঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য পেয়ে দক্ষিণের ওই রাজ্যে সরকার গড়েছে কংগ্রেস। তার পরে কেবল মৌখিক প্রস্তাব নয়, রীতিমতো প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক করে দলের তরফে লিখিত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে সনিয়াকে রাজ্যে এসে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে। সূত্রের খবর, সনিয়ার জন্য এমন আমন্ত্রণ বা প্রস্তাবে ভূমিকা ছিল বাংলার কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সির। এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি তেলঙ্গানায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে, সেই সঙ্গে কেরলেও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তেলঙ্গানায় বিধানসভা ভোটের সময়েও এআইসিসি-র তরফে দায়িত্বে ছিলেন তিনি। দীপার উপস্থিতিতেই তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব আলোচনা করে সনিয়াকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব নিয়েছেন। তার পরে রেবন্ত রেড্ডিরা সেই প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছেন এআইসিসি-র কাছে।

দীপারা অবশ্য কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়ার সঙ্গে তেলঙ্গানার আবেগ সংক্রান্ত যোগসূত্র সামনে রেখেছেন। তেলঙ্গানার কংগ্রেস নেতৃত্বের যুক্তি, অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে পৃথক রাজ্য তেলঙ্গানা তৈরির পিছনে সনিয়ার বড় ভূমিকা ছিল। এ বার বিধানসভা ভোটের আগে সনিয়াও তাঁর ভিডিয়ো-বার্তায় বলেছিলেন, রাজ্যবাসী তাঁকে ‘আম্মা’র মর্যাদা দিয়েছেন। সেই তেলঙ্গানা থেকে এ বার সনিয়া লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ওই ‘বন্ধন’ আরও দৃঢ় হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রেবন্ত এই যুক্তি নিয়ে এআইসিসি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।

Advertisement

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্যের মতে, ‘‘উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি দলের জন্য তেমন ভাল কিছু নয়। অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের পরে হিন্দুত্বের হাওয়া আরও জোরালো করে তোলা হবে। এমতাবস্থায় রায়বরেলীকে নিরাপদ আসন বলা যায় না। তাই তেলঙ্গানার কংগ্রেস যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা বিবেচনা করে দেখাই উচিত। ম্যাডামের জন্য লোকসভায় জয় তো দরকার!’’ কয়েক মাস আগে কলকাতায় দলীয় বৈঠক করতে এসে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছিলেন, রায়বরেলীতে এ বার তাঁরা কংগ্রেসকে ছেড়ে দেবেন না! সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা কত দূর হবে, তার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। সব মিলিয়ে দক্ষিণের বিকল্প প্রস্তাব ভেবে দেখতে হচ্ছে কংগ্রেসকে।

দলের মধ্যেই অবশ্য অন্য একটি মতও আছে। কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘রাহুল ইতিমধ্যেই কেরলের ওয়েনাড়ে গিয়ে সাংসদ হয়েছেন। এর পরে সনিয়া তেলঙ্গানায় গিয়ে প্রার্থী হলে উল্টো প্রচার হবে যে, উত্তর ভারতে আমরা আর জমি পাচ্ছি না! তাই দক্ষিণ ভারতের ভরসায় লড়তে হচ্ছে।’’

অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের মেডাক (এখন তেলঙ্গানায়) থেকে ১৯৮০ সালে লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সে ছিল তাঁর সরকারে ফেরার লড়াই। ইন্দিরার পথেই তাঁর পুত্রবধূ সনিয়া রায়বরেলী থেকে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণমুখী হলে ইতিহাসের একটা অংশের পুনরাবৃত্তি হবে। সেই সঙ্গেই মা সনিয়া ও ছেলে রাহুল যে দু’রাজ্য থেকে লড়বেন, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকবেন বঙ্গের এক নেত্রীও! সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার বল এখন এআইসিসি-র কোর্টে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement