ফাইল চিত্র।
বিরোধী রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলেছেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। সাম্প্রতিক অতীতে যা কখনই দেখা যায়নি, সেই সক্রিয়তা দেখিয়ে তাঁর ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে পঞ্জাবে দাঁডি়য়ে কৃষক-দরদি বক্তৃতা দিতে দেখা গেল তাঁকে। ঘোষণা করলেন কৃষক আন্দোলনে মৃত চাষিদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ। কেন্দ্রকে বিঁধলেন ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সংক্রান্ত নীতি নিয়ে। তার আগে দিল্লিতে আপ নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী শক্তিকে পোক্ত করা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সারলেন।
শনিবার এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদবের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন কেসিআর। জানা গিয়েছে, এর পর বেঙ্গালুরুতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন তিনি। পরের গন্তব্য মহারাষ্ট্র। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীঅন্না হজারের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গেও যাওয়ার কথা আছে তাঁর।
টিআরএস নেতার এ হেন ভারত সফরের কার্য ও কারণ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে রাজনৈতিক শিবিরে। যদিও স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি কেউই। বিজেপি-বিরোধিতায় তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা কখনই সে ভাবে তৈরি হয়নি। তবে গত এক মাস ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে কিছুটা মুখর হতে দেখা গিয়েছে কেসিআর এবং তাঁর দলকে। আগে সংসদের ভিতরে বা বাইরে যা সে ভাবে দেখা যায়নি। গত মাসের গোড়ায় তিনি দিল্লি এসে কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করতে ধর্নাতেও বসেছিলেন। দাবি, নতুন কৃষিনীতি তৈরি করে তেলঙ্গানা থেকে খাদ্যশস্য কিনুক কেন্দ্র।
আগামী বছর তেলঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচন। মানুষের ক্ষোভ জমেছে। কেসিআর-এর পরিবারের বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতির অভিযোগ। স্বাভাবিক ভাবেই কেসিআর-এর এই অতিসক্রিয়তার সঙ্গে তাঁর বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটিকেও মাথায় রাখা হচ্ছে। আজ দিল্লিতে কেজরীওয়ালের বাসভবনে তাঁর সঙ্গে কেসিআর-এর বৈঠকের পর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্র-বিরোধী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন দুই নেতা। দেশের উন্নয়নে রাজ্যের বরাদ্দ এবং ভূমিকাকে খর্ব করা হচ্ছে বলেই কেসিআর স্বর তুলেছেন। কেসিআর একা নন, তাঁর মন্ত্রিসভার বেশ কিছু সদস্যও তাঁর সঙ্গে দিল্লি তথা ভারত সফর করছেন।
দিল্লি পর্ব মিটিয়ে রবিবার তিনি ছুটেছেন চণ্ডীগড়ে। গলওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি গত বছর কৃষি-আইন বিরোধী আন্দোলনে মৃত চাষিদের পরিবারের পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গিয়েছে চন্দ্রশেখর রাওকে। মৃত ছ’শো কৃষক পরিবারকে সামনে রেখে তিনি বক্তৃতা দিয়েছেন। তেলঙ্গানা সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক মৃত কৃষকের পরিবারপিছু তিন লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন কেসিআর। তাঁর স্লোগান, ‘কৃষকরাই সরকার বদলে দিতে পারেন।’ তাঁর প্রস্তাব, কৃষকেরা দেশজোড়া আন্দোলন তৈরি করুন, আপ-এর মতো অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে তিনিও সেই আন্দোলনে যোগ দেবেন এবং সব রকম ভাবে সমর্থন করবেন। আজকের সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষক আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকায়েত। বক্তৃতায় বারবার তাঁর নাম উল্লেখ করতে শোনা গিয়েছে চন্দ্রশেখর রাওকে।
অতীতেও ‘ফেডেরাল ফ্রন্ট’-এর ডাক দিয়ে কেসিআর-কে মাঠে নামতে দেখা গিয়েছিল। সে বার অভিযোগ উঠেছিল, তিনি বিজেপির হয়েবিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরাতে নেমেছেন। ইদানিং কেসিআরবলছেন, বিকল্প ফ্রন্ট নয়। তিনি বিকল্প নীতির পক্ষে। যদিও কংগ্রেস-সহ একাদিক বিরোধী দলের অভিযোগ, কংগ্রেসকে কোনঠাসা করার জন্য বিজেপির বি-টিম হতে গিয়ে তেলঙ্গানায় বিজেপিকেই বাড়িয়ে ফেলেছেন কেসিআর। এখন তারাই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। বিপদটা দেরিতে বুঝেছেন টিআরএস নেতা। তেলঙ্গানা ভোটের আগে তাই তাঁর এত আয়োজন। কিন্তু আদতে বিজেপি-বিরোধী হিসেবে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই কম।