ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত তেলঙ্গানা। ছবি: টুইটার।
গত কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি এবং নদীবাঁধগুলি থেকে জল ছাড়ার ফলে এক রাতের মধ্যে ১৫ ফুট জলের তলায় চলে গেল তেলঙ্গানার গোটা একটি গ্রাম। শেষমেশ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং বায়ুসেনার যৌথ প্রচেষ্টায় রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার করা হল গ্রামের ১৯০০ জন বাসিন্দাকে।
ভারী বৃষ্টির কারণে তেলঙ্গানার বহু জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করেছে নদীগুলির জল। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি রাজ্যের জয়শঙ্কর ভূপালপল্লি জেলার। এই জেলারই মোরাঞ্চাপল্লি গ্রাম এক রাতের মধ্যে ১৫ ফুট জলের নীচে চলে গিয়েছে। কেউ গাছের উপরে, কেউ বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর অপেক্ষা করছিলেন কখন তাঁদের উদ্ধার করা হবে।
এক গ্রামবাসীর কথায়, “দু’দিন ধরেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে এই জেলায়। মোরাঞ্চাপল্লির পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে ছোট নদী মোরাঞ্চাপল্লি ভাগু। বৃষ্টির কারণে সেটি এমনিতেই ফুলেফেঁপে উঠেছিল। তার পর সেই জল গ্রামে ঢুকতে শুরু করে।” তিনি আরও জানান, ২৬ জুলাইয়ের রাতে সেই জল আচমকাই বেড়ে গিয়ে হু হু করে গোটা গ্রামকে প্লাবিত করতে শুরু করে। গ্রামবাসীরা সারা রাত জেগে কাটিয়েছেন। প্রতি মুহূর্তে জলের স্তর বেড়ে চলেছিল। তাঁর কথায়, “এক ঘণ্টার মধ্যে এক মানুষ সমান জল হয়ে গিয়েছিল। আতঙ্কের প্রহর গুনছিলাম। এ বার বোধহয় আর বাঁচব না।”
যত ক্ষণে উদ্ধারকারীদের কাছে খবর পৌঁছেছিল, তত ক্ষণে ১৫ ফুট জলের তলায় চলে গিয়েছিল গ্রাম। কে বেঁচে, কে নেই, কেউ কারও খবর রাখার মতো পরিস্থিতি ছিল না বলে এক গ্রামবাসীর দাবি। রাতেই এনডিআরএফ উদ্ধারে নামে। বায়ুসেনার দু’টি হেলিকপ্টারও উদ্ধারে নামে। দ্রুত উদ্ধারকাজ চালিয়ে ১৯০০ জন গ্রামবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, উদ্ধারকাজ চালানোর সময় দুই গ্রামবাসী জলের তোড়ে ভেসে যান।
তেলঙ্গানায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯। হনুমানকোণ্ডায় বি প্রেম সাগর নামে এক কিশোর জলমগ্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে। মেহবুবাবাদ জেলায় দুই ভাই জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন। হনুমানকোণ্ডায় আরও এক জন জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন। পেড্ডাপল্লি জেলায় আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে।
বুধবার থেকে ভারী বৃষ্টির জেরে মুলুগু, জয়শঙ্কর ভূপালপল্লি, ভাদরাদরি কোঠাগুডেম, করিমনগর, হনুমানকোণ্ডা, আদিলাবাদ, ওয়ারাঙ্গল এবং জনগাঁওয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় এই জেলাগুলিতে ২৩০-৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।