Telangana Assembly Election 2023

নিজের মাঠে লড়াই কঠিন আজহারের

এ বার ঘরের সামনে এসে একটি মহার্ঘ্য কলম বার করে কিছু অটোগ্রাফ শিকারীকে খুশি করছেন আজ্জু মিঞা।

Advertisement

অগ্নি রায়

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৭
Share:

প্রচারে আজাহার। ছবি: পিটিআই।

সাদা খাদির উপর ছড়িয়ে গোলাপের পাপড়ি। সামনের টেবিলেও ফুল ভর্তি। পরিত্রাহি ডি জে ভ্যান সঙ্গীত এবং ঝাঁপিয়ে পড়া কর্মকর্তাদের চাপ কাটিয়ে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ককে ঢোকানো হয়েছে একতলার ছোট্ট খুপরি ঘরে। সেখানে সামান্য নিরালা এবং কথা বলার স্বল্পমেয়াদি সুযোগ। এরপরই আবার তিনি বেরিয়ে লম্বা রাস্তা ধরবেন প্রচারের।

Advertisement

‘‘আপনারা এ ভাবে আমাকে ঘিরে রাখলে তো হেঁটে লাভ নেই। তার চেয়ে বরং আমি ভ্যানের উপর উঠে দাঁড়াই। উঁচু বাড়িগুলো থেকে সবাই দেখতে পাবেন। ভ্যানটা খুব আস্তে চালান।’’ খুবই ঠান্ডা স্বরে পরিচিত ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে কথাগুলো বললেন পাশের এক ভোট ম্যানেজারকে, ঠিক যে ভাবে বেঙ্কটপতি রাজুকে পরামর্শ দিতেন ক্রিজে জমে যাওয়া স্টিভ ও-র রক্ষণে ফাটল ধরানোর। গলা শান্ত হলেও ভঙ্গি একই রকম ক্ষিপ্র। টেবিল ছেড়ে ওঠার সময়ে সামনে পড়ে থাকা একটি ফুল ছুঁড়ে দিলেন শূন্যে, একটু পিছনের দিকে। না-তাকিয়ে অব্যর্থ লুফেও নিলেন সেটি! এক সময় যে ‘কেতা’-র দিকে গোটা ভারত চোখ গোল করে চেয়ে থাকত!

ডি জে ভ্যানে উঠে গেলে আর সুযোগ পাওয়া যাবে না। আটকাতে হবে কিছু বলে। পূর্বপরিকল্পিত ছিল না, কিন্তু অবচেতনের ‘ফ্যান বয়’ চেঁচিয়ে উঠল প্রায়। ‘‘আজহার ভাই, চুরাশির ইডেন টেস্টে কিন্তু মাঠে ছিলাম। ইনিংসটা পুরো বলে দিতে পারি!’’ একটু চমকে তাকালেন, কারণ ওই পরিবেশে এই ধরনের গুগলি বোধহয় আশা করেননি। ‘‘আরে তোমার মনে আছে! অনেক দিন হয়ে গেল তো। ইডেন আমার খুব প্রিয় জানো তো?’’

Advertisement

আমি কেন, লক্ষ লোক তা জানে! কিন্তু এখানে ইডেনের দরজা খুলে সোজা জুবিলি হিলের এই বিচিত্র পাঁচমেশালি নির্বাচনী ক্ষেত্রে ঢুকে পড়া তো গেল। যেখানে বস্তি, গলি, অভিজাত পাড়া, চোখ ধাঁধানো বাংলো বাড়ি — সব মিলেমিশে। আমরা তখন শক্তিপেট ডিভিশনের সামথা কলোনিতে। এখান থেকে পদযাত্রা করে আজহার পৌঁছবেন মাধুরা নগর। এই প্রথম নিজের পিচে ব্যাট করছেন। এর আগে ২০০৯-এ লোকসভায় উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ (জিতেছিলেন) থেকে, ২০১৪ সালে দাঁড়িয়েছিলেন রাজস্থানের টঙ্ক জেলা থেকে। সেখানে এক লাখেরও বেশি ভোটে পরাজয়। নিজের জন্মভিটে থেকে লড়তে কেমন লাগছে? ‘‘খুবই খুশি। নিজের মাঠে খেলতে কার না ভাল লাগে? কিন্তু একটা কথা মনে রেখো। আগেরগুলো ছিল লোকসভা। এই প্রথম বিধানসভায় লড়ছি। এই দুই লড়াই একেবারেই আলাদা।’’

কেন এবং কতটা আলাদা?

এ বার ঘরের সামনে এসে একটি মহার্ঘ্য কলম বার করে কিছু অটোগ্রাফ শিকারীকে খুশি করছেন আজ্জু মিঞা। ‘‘এখানে অনেক ছোট ছোট বিষয়কেও মাথায় রাখতে হচ্ছে। স্থানীয় সমস্যার দিকে নজর দিতে হচ্ছে। এই দেখ, তোমার মাথার উপরেই খোলা তারের জাল ঝুলছে। এমনটা এখানে সর্বত্র। নালা-নর্দমার অবস্থা কহতব্য নয়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ঝুপড়িগুলিতে। গত ন'বছরে বিআরএস সরকার কিছু করেনি। শুধু মস্তানি আর চোখ রাঙানো ছাড়া। কংগ্রেস এলে হাল বদলাবে, এই নিশ্চয়তা ভোটারদের দিচ্ছি।’’

একেবারে ভুল বলছেন না আজহার। খুবই সাদামাঠা বিবর্ণ অন্তত এই কলোনির চেহারা। জিপে উঠেও মাঝে মধ্যেই দাঁড় করাতে বলে লাফ দিয়ে নামছেন বিদ্যুৎগতিতে। রাস্তার ধারে মাংস কাটছেন শেখ মুদস্সর। তাঁকে অবাক করে পাশে গিয়ে বসে দু'কথা বললেন। প্রচার পুস্তিকা হাতে ধরালেন। চায়ের দোকানে গিয়ে এলাচ দেওয়া চায়ে চুমুক দিলেন। অর মালা এবং উত্তরীয় সামলাচ্ছেন তাঁকে ঘিরে থাকা ভোট ম্যানেজারেরা।

এই পদযাত্রায় সকলেই মুসলিম। তিনি নিজে কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু মুখ, ক্রিকেট তারকা এবং প্রাক্তন সাংসদ। কোন পরিচয়কে সামনে আনছেন এ বারের তেলঙ্গানা ভোটে? না ভেবেই উত্তর আজহারের, ‘‘আমি এখন শুধুই একজন রাজনীতিবিদ। আর অবশ্যই আমি মুসলিম, কিন্তু সব ধর্মের মানুষের কাছেই ভোট চাইছি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিশেষ করে বলছি কংগ্রেসকে ভোট দিতে। কারণ, তাঁদের ভোট যদি ভাগ হয়ে যায়, লাভটা হবে বিজেপি-র।’’

বার্তা দিচ্ছেন বটে, কিন্তু লড়াইটা খুবই কঠিন আজহারের। প্রাণবন্ত পিচে গ্লেন ম্যাকগ্রার লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি মোকাবিলার মতোই। এখানকার মুসলিম ভোট ভাগ করতে আসাদুদ্দিন ওয়েইসি-র দল এআইএমআইএম প্রার্থী দিয়েছে পুরসভার কর্পোরেটর মহম্মদ রাশিদ ফারাজুদ্দিনকে। যিনি এখানে সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। আর আজহারকে রাজনৈতিক মাঠে কোথায় দেখল জুবিলি হিল? হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিশনেও তাঁর ভূমিকা যথেষ্ট বিতর্কিত।

পদযাত্রা থেকে ফিরে আসার আগে একটি প্রশ্ন না করে থাকা গেল না। বিশ্বকাপ ফাইনালের ফলাফলে তিনি কি হতাশ? ‘‘একদমই না। ছেলেরা গোটা প্রতিযোগিতায় দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে। একটা খারাপ দিন তো আসতেই পারে। দুভার্গ্যবশত সেটা ফাইনালেই হল।’’

আর ফাইনালের পর প্রধানমন্ত্রীর ড্রেসিংরুমে গিয়ে সান্ত্বনা দেওয়াটা? একটা চোখ টিপে মৃদু হাসলেন— ‘‘কিঁউ ইয়ে সব পুছ রহে হো ইয়ার!’’ অর্থাৎ জুবিলি হিলের স্থানীয় সমস্যাকেই আপাতত মিডল স্টাম্প করেছেন মিঁঞা। অন্যত্র চোখ সরিয়ে বিতর্ক বাড়াতে চাইছেন না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement