রাঘোপুর কেন্দ্রে জয়ী তেজস্বী যাদব। ছবি পিটিআই।
সেনাপতি ছিলেন মহাজোটের। একাই জোয়াল টেনেছেন। কিন্তু ক্ষমতা দখল বোধহয় এ যাত্রায় অধরাই থেকে গেল তেজস্বী যাদবের। পিতার ‘জঙ্গলরাজ’-এর দায় তাড়া করল পুত্রকেও। ফলে তীরে এসেও তরী ডুবুডুবু।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায়, উত্তরাধিকারের বোঝাতেই আটকে গিয়েছে তেজস্বীর জয়রথ। চাকরির অভাব, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশায় নীতীশ সরকারের অসংবেদনশীল মনোভাবের প্রসঙ্গকে সামনে এনে নতুন প্রজন্মের ভোট নিজের দিকে টানতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এমনকি, লালু প্রসাদের পিছন থেকে সরে যাওয়া যাদব-মুসলিম ভোটকে ফের এককাট্টাও করতে পেরেছেন। তেমনই উল্টো দিকে যাদব ভোটারদের অতিসক্রিয়তা, প্রচারসভায় যাদবদের ভিড়, তাদের শরীরী ভাষা উস্কে দিয়েছে পনেরো বছরের যাদব শাসনের স্মৃতি। সে কথা মাথায় রেখেই এনডিএ প্রার্থীর বোতামে ভোট দিয়েছেন সেই জমানার সাক্ষী মধ্যবয়সি, প্রবীণ ও মহিলারা। ফলে জেতা ম্যাচ স্লগ ওভারে হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের প্রাক্তন ক্রিকেটার, সদ্য ৩১-এ পা দেওয়া তেজস্বীর।
অনেকেরই মত, ‘জঙ্গলরাজ’ প্রচার যে বিপক্ষে যেতে পারে, তা বোঝা উচিত ছিল তেজস্বীর। এ নিয়ে একাধিক বার সতর্কও করে দেন বর্ষীয়ান নেতারা। আরজেডির আব্দুল বারি সিদ্দিকি, ভোলা যাদবের মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার পরামর্শও দেওয়া হয়। কিন্তু পিতা লালু প্রসাদের মতোই পরিবারের বাইরে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার সম্ভাবনা গোড়াতেই খারিজ করে দেন তেজস্বী। আরজেডির এক নেতার কথায়, ‘‘নীতীশ থেকে মোদী, সকলেই যাদবরাজকে জঙ্গলরাজ বলে প্রচার করেছেন। তেজস্বীর বোঝা উচিত ছিল, অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হলে এই প্রচারের সুযোগ থাকত না।’’
তবে তেজস্বীর নেতৃত্বে দলের ভোট অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছে আরজেডি। একক ভাবে বৃহত্তম দল হয়ে ওঠার দৌড়ে রয়েছে তারা। গত ভোটে যেখানে ১৮.৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল দল, সেখানে তেজস্বীর নেতৃত্বে (রাত আটটার খবর অনুযায়ী) আরজেডি ২৩.৪ শতাংশ ভোট কুড়িয়ে নিয়েছে। দাবি, ২০০৫ সালের পর এই প্রথম এত ভোট পেল দল।
আরও পড়ুন: বিহারে ৫ আসন দখল, তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে ওয়েইসির দল
অথচ সেপ্টেম্বরে ভোট ঘোষণার সময়েও এনডিএ-র পক্ষে দেওয়াল লিখন ছিল স্পষ্ট। কিন্তু এনডিএ-র অন্তর্বিরোধ, তেজস্বীর মারকাটারি প্রচারে খেলা ঘুরতে থাকে প্রচারপর্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই। হাওয়া ওঠে ‘নীতীশ হটাও’। যার প্রভাব পড়েছে ভোটে। কার্যত তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছে জেডিইউ।
কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে সামান্য দূরে থামতে হয়েছে মহাজোটকেও। যা দেখে আরজেডি শিবির বলছে, এনডিএ-র বিরুদ্ধে একাই মুখ ছিলেন তেজস্বী। জোটসঙ্গী বামেরা অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করলেও কংগ্রেসের কাছ থেকে বিশেষ সাহায্য মেলেনি। উল্টে তেজস্বীকেই প্রচারে যেতে হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে।