সমাজকর্মী ও সাংবাদিক তিস্তা শেতলবাদ। ফাইল চিত্র।
গুজরাতের নিম্ন আদালতে রাজ্যের পুলিশ আগেই অভিযোগ তুলেছিল, ২০০২-এর হিংসার পরে সমাজকর্মী ও সাংবাদিক তিস্তা শেতলবাদ প্রয়াত কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেলের কথায় ‘ষড়যন্ত্র’ করে মিথ্যে তথ্যপ্রমাণ খাড়া করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, গুজরাতের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কালিমালিপ্ত করা।
এ বার গুজরাত সরকার সুপ্রিম কোর্টেও হলফনামা দিয়ে একই অভিযোগ তুলল। ফারাক বলতে, সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় সরাসরি আহমেদ পটেলের নামের উল্লেখ নেই। এক ‘প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা’র নির্দেশে ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে গুজরাত সরকার দাবি জানিয়েছে।
কিছু দিন আগে গুজরাত সরকার ২০০২-এর হিংসার সময় বিলকিস বানোর ধর্ষণ ও তাঁর সন্তান, পরিবারের সদস্যদের খুনের মামলায় ১১ জন অপরাধীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে। রবিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাতে গিয়ে বলেছিলেন, এক সময়ে গুজরাতের ভাবমূর্তি, সুনাম নষ্ট করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। গুজরাতে লগ্নি আটকানোর চেষ্টা হয়েছিল। এ বার সুপ্রিম কোর্টেও গুজরাত সরকার ‘ষড়যন্ত্র’-এর অভিযোগ তোলায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এই তিনটি ঘটনার মধ্যে স্পষ্ট যোগসূত্র দেখতে পাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, তিন-চার মাসের মধ্যেই গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সেই নির্বাচনে ‘গুজরাতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’-কেই হাতিয়ার করতে চলেছে। সেই সুবাদে ২০০২-এ গোধরা কাণ্ড ও তার পরে গুজরাতে হিংসার ঘটনা থেকেও নরেন্দ্র মোদী নিজেকে দায়মুক্ত করে ফেলার চেষ্টা করবেন। চেষ্টা হবে সবটাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দেওয়ার।
গুজরাত হিংসার তদন্তে এসআইটি নরেন্দ্র মোদীকে ছাড় দিলেও হিংসায় নিহত এহসান জ়াফরির স্ত্রী জ়াকিয়া সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন। শীর্ষ আদালত তা নাকচ করে দেয়। সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকারও সমালোচনা করে। তার পরেই তিস্তাকে গ্রেফতার করা হয়। নিম্ন আদালত বা গুজরাত হাই কোর্টে জামিন না-পেয়ে তিস্তা এ বার সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েছেন। মঙ্গলবার তাঁর জামিনের আর্জির শুনানি হবে। তার আগেই আজ গুজরাত সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে তিস্তার পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ জানিয়েছে।
কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, “পাঁচ বছর আগে গুজরাতের ভোটে বিজেপির হার ঠেকাতে মোদী দাবি করেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে কংগ্রেস নেতারা গুজরাতের ভোট নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। এ বার তিনি ২০০২-এর হিংসায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে অভিযোগের পুরোটাই ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিতে চাইছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগকে গুজরাতের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা বলে দেখাতে চাইছেন। তিস্তা শেতলবাদকে গ্রেফতার করে, তাঁর পিছনে প্রয়াত আহমেদ পটেলের মদত রয়েছে বলে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” গুজরাত সরকারের দাবি, শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তিস্তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশের কাছে প্রমাণ ও সাক্ষী রয়েছে। পুলিশের অভিযোগ— তদন্তে তারা জেনেছে, তিস্তা রাজনৈতিক, আর্থিক ও অন্য সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে ষড়যন্ত্রে যোগ দেন।