মুম্বইয়ের ছাত্র-মৃত্যুতে কি নীল তিমির রহস্য

মনপ্রীত সিংহ। বছর চোদ্দোর ক্লাস নাইনের ওই ছাত্র এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। তার পরিবারের সঙ্গে এখনও কথা বলতে পারেনি পুলিশ। তবে মনপ্রীতের বন্ধু-বান্ধবদের প্রশ্ন করতে শুরু করেছে তারা। জানা গিয়েছে, ‘ব্লু হোয়েল’ নামে এক অনলাইন গেম নিয়ে চর্চা করত ওই কিশোর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০৪:০১
Share:

মারণ-খেলা: ‘ব্লু হোয়েল’ গেমে এ ভাবেই আঁকতে হয় ছবি।

বহুতলের ছ’তলা থেকে এক কিশোরকে ঝাঁপ দিতে দেখে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। শনিবার সন্ধেবেলা মুম্বইয়ের শহরতলি পূর্ব আন্ধেরির শের-এ-পঞ্জাব এলাকার সেই ঘটনা আপাত ভাবে আত্মহত্যার হলেও তদন্তে নেমে পুলিশের ধারণা, অনলাইন গেমের হাতছানিতেই এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই কিশোর। আপাতত ওই কিশোরের মোবাইল আর কম্পিউটার ঘেঁটে দেখছে পুলিশ। কোন কোন সোশ্যাল মিডিয়ায় সে কতটা সক্রিয় ছিল, তা-ও দেখা হচ্ছে।

Advertisement

মনপ্রীত সিংহ। বছর চোদ্দোর ক্লাস নাইনের ওই ছাত্র এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। তার পরিবারের সঙ্গে এখনও কথা বলতে পারেনি পুলিশ। তবে মনপ্রীতের বন্ধু-বান্ধবদের প্রশ্ন করতে শুরু করেছে তারা। জানা গিয়েছে, ‘ব্লু হোয়েল’ নামে এক অনলাইন গেম নিয়ে চর্চা করত ওই কিশোর। এই গেমের চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে মনপ্রীত। সে-ই এ দেশে এই খেলার প্রথম শিকার বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু ‘ব্লু হোয়েল’ই নয়, অনলাইন দুনিয়ায় এ রকম ‘সুইসাইড গেম’ আরও রয়েছে।

২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় ওই মারণ খেলা। প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দু’বছর পরে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীল তিমিরা মারা যাওয়ার আগে জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠে। যেন আত্মহত্যার জন্যই। সেই থেকেই এই গেমের নাম হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল’।

Advertisement

আরও পড়ুন: ব্লু হোয়েল তো বটেই, ভয়ঙ্কর এই অনলাইন গেমগুলি থেকেও সাবধান থাকুন

আরও পড়ুন: অনলাইন গেম চ্যালেঞ্জ! জিততে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী ছাত্র

ফিলিপ বুদেইকিন নামে সাইকোলজির এক প্রাক্তন ছাত্র নিজেকে ওই গেমের আবিষ্কর্তা বলে দাবি করে। বছর একুশের ওই রুশ যুবকের দাবি, যারা মানসিক অবসাদে ভোগে, প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার কথা ভাবে, তাঁদের আত্মহত্যার জন্য মজাদার পথ বাতলাতেই এই গেমের ভাবনা। ১৬ জন স্কুলছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। পুলিশকে ফিলিপ বলেছে, ‘সমাজকে পরিচ্ছন্ন করাই’ তার উদ্দেশ্য। এখনও অবধি গোটা বিশ্বে এই খেলায় অংশ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩০ জনের।

৫০ দিনে খেলতে হয় খেলাটি। অ্যাডমিনের নির্দেশে খেলোয়াড়কে নানা ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। যার শেষতমটি হল আত্মহত্যা। প্রথমে সাদা কাগজে তিমি মাছের ছবি এঁকে শুরু হয় খেলা। তার পর খেলোয়াড়কে নিজেরই হাতে পিন বা ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আকঁতে হয় সেই তিমির ছবি। একা ভূতের ছবি দেখতে হয়, আবার ভোর চারটে কুড়ি মিনিটে ঘুম থেকেও উঠতে হয়। চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিরিক্ত মাদকসেবনও রয়েছে। এই খেলায় প্রত্যেকেই মারা গিয়েছেন, এমনটা নয়। মারাত্মক আঘাত নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জাও লড়ছেন অনেকে।

এ বার মনপ্রীতের ঘটনায় অশনি সঙ্কেত দেখছেন মনোবিদেরা। তাঁদের বক্তব্য, ইন্টারনেটে আসক্তির কারণে নেট দুনিয়া আর আসল জগতের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছে না যৌবনের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে-মেয়েরা। অনলাইনের চরিত্রের মৃত্যু হলে তাকে ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু বাস্তবে আত্মহত্যা করলে, তাকে যে আর ফেরানো যাবে না, গেম খেলতে গিয়ে সে কথা মাথায় রাখছে না তারা। এই খেলা নিষিদ্ধ করা যায় কি না, সে প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement