পাচারের আঁধার পেরিয়ে নিজঘরে

দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানাচ্ছে, ২০১৮ সালের নভেম্বরের প্রথম দিকে নয়াদিল্লি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বছর ষোলোর এক কিশোরীকে উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে দেখে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০৩:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

চোখেমুখে আনন্দের ছোঁয়া। আর কিছুটা দূরেই তার নিজের দেশ। বাংলাদেশ। তার পরে সোজা সাতক্ষীরার গ্রাম। নিজের বাড়ি। যেখানে অপেক্ষা করছেন বাবা-মা, দিদি-বোনেরা। এক বছর হয়ে গিয়েছে, তাঁদের দেখেনি সে। সম্পূর্ণ ভিন্‌ দেশে দমবন্ধ করা একটা জায়গায় থাকতে থাকতে সে হাঁপিয়ে উঠেছিল। তবে সোমবার তার উজ্জ্বল চোখমুখ দেখে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজনও খুশি। এক বছর পরে মেয়েটিকে বাড়িতে ফেরত পাঠাতে পারছেন তাঁরা।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল?

দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানাচ্ছে, ২০১৮ সালের নভেম্বরের প্রথম দিকে নয়াদিল্লি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বছর ষোলোর এক কিশোরীকে উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে দেখে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। সেখানকার শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশে তাকে পাঠানো হয় এক হোমে। সেই হোমে থাকাকালীনই কাউন্সেলিংয়ে জানা যায়, মেয়েটি বাঙালি। সে জানায়, তার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে নয়। বাংলাদেশে। সেখানে তার বাবা-মা এবং পাঁচ বোন রয়েছে। বাবা চাষ করে সংসার চালান। অভাবের সংসারে থাকার সময়েই রাজা নামে স্থানীয় এক যুবক তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে বার করে এনেছিল। কিন্তু মেয়েটির ভুল ভাঙে গুরুগ্রামে পৌঁছনোর পরে। সেখানে তাকে এক বন্ধুর বাড়িতে তোলার কয়েক দিন পরেই পালিয়ে যায় রাজা। সেই বাড়ি যে নিরাপদ নয়, এক দিন পরেই তা বুঝতে পারে ওই কিশোরী। সে বুঝতে পারে, রাজা আর ফিরবে না। তাকে বিক্রি করে পালিয়ে গিয়েছে সে। কোনও রকমে রাজার বন্ধুর গুরুগ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে পৌঁছে যায় নয়াদিল্লি স্টেশনে। সেখান থেকে দু’দিন পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হোমে পাঠিয়ে দেয়।

Advertisement

হোমে নিয়ে যাওয়ার পরে জানা যায়, মেয়েটি দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নয়াদিল্লির কালীমন্দিরধামের শিশু কল্যাণ সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, তার গর্ভপাত করানো হবে। সেই অনুযায়ী দিল্লির হোমে থাকাকালীনই তার গর্ভপাত করানো হয় এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি জানানো হয়। খোঁজখবর নেওয়া হয় বাংলাদেশে। সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে জানানো হয়, ওই কিশোরীর বাড়ি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ঠিক হয়, সোমবার সকালে তাকে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের তুলে দেওয়া হবে সীমান্তরক্ষীদের হাতে।

রবিবার দিল্লি থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে ওই কিশোরীকে কলকাতায় আনা হয়। সেখান থেকে দিল্লির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অজিত রায় ওই মেয়েটিকে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের হাতে তুলে দেন। তাঁদের হাত ধরেই ওই কিশোরী সোমবার রাতে সাতক্ষীরার চাঁদখালি গ্রামে নিজের বাড়িতে পৌঁছে যায়।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement