ভারী বৃষ্টিতে বানভাসি মেরিনা সৈকত। ছবি পিটিআই।
প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত তামিলনাড়ুর বিস্তীর্ণ এলাকা। গত পরশু থেকে রাতভর বৃষ্টিতে রাজধানী চেন্নাইয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শহরতলির বেশ কিছু এলাকা ইতিমধ্যেই জলের নীচে। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে আজ প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আগামিকাল ও পরশু চেন্নাইয়ের সব স্কুল বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতি আগামিকাল যে আরও ঘোরালো হতে পারে তার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তারা জানিয়েছে, আগামিকাল রাজ্যে অতি থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
তামিলনাড়ুতে গত কাল শুরু হওয়া বৃষ্টি আজ বেলা পর্যন্ত চলেছে। গত ছ’ বছরে এত বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, আজ বেলা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শুধু চেন্নাইয়েই ২১ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার জেরে নিচু এলাকাগুলি জলমগ্ন। শহরের প্রধান রাস্তাগুলি পুরোপুরি জলের নীচে। রাস্তার
ধারে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনগুলির অর্ধেক জলে ডুবে গিয়েছে। অতি প্রয়োজনে রাস্তায় যাঁরা বেরি্য়েছেন, কোমর জল ঠেলে তাঁদের যাতায়াত করতে হয়েছে। শহরের নিচু এলাকাগুলি থেকে বাসিন্দাদের ইতিমধ্যেই অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। সাইদাপেট, ভেলাচেরি, আদমবাক্কাম, মাদিপাক্কাম এবং পশ্চিম মাম্বালামের বেশ কিছু এলাকায় দু’তিন ফুট জল দাঁড়িয়ে। প্রবল বৃষ্টিতে শহরের বহু গাছ উপড়ে গিয়েছে।
জলমগ্ন চেন্নাইয়ের রাস্তা। হাঁটুজলে বাড়ির পথে পথচারীরা।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আজ বৈঠকে বসেন স্ট্যালিন। পরে কালো রেনকোট পরে জলমগ্ন রাস্তায় নামেন তিনি। বেশ কিছু ক্ষণ ঘুরে দেখেন তিনি। পরে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানান, ত্রাণ ও উদ্ধারে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে নামানো হয়েছে। স্ট্যালিন বলেন, ‘‘দুর্যোগে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সরকার সকলকে ক্ষতিপূরণ দেবে। শহরে ৪৪টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। আজ সকাল থেকে ৫০ হাজার খাবারের প্যাকেট বিলি করা হয়েছে।’’ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চেন্নাই, কাঞ্চিপুরম ও চেঙ্গালপেট জেলায় আগামী দু’দিন সব স্কুল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বৃষ্টিতে বহু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরে দ্রুত সেগুলি মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চেন্নাই এবং সংলগ্ন এলাকার যে সব জায়গা প্লাবিত হয়েছে, সেখানে নৌকা নামিয়ে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানো হচ্ছে। তামিলনাড়ুর বন্যা কবলিত জেলাগুলিতেও উদ্ধারের কাজ ও ত্রাণ বণ্টনের কাজ চালাচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। চেন্নাইয়ের তিনটি জলাধারের জলস্তর ইতিমধ্যেই বিপদসীমা ছুঁয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস যদি মিলে যায় এবং আগামিকাল যদি অতি থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়, তবে জলাধারগুলি মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মত আধিকারিকদের। সেক্ষেত্রে জলাধার থেকে জল ছাড়লে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা-ও ভাবাচ্ছে তাঁদের।
প্রশাসনের আশঙ্কা, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এই দুর্যোগে ত্রাণ শিবিরগুলিতে দূরত্ববিধি সে ভাবে মানা সম্ভব হবে না। ফলে কোভিড সংক্রমণ দ্রুত ছাড়তে পারে।