দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত স্ট্যালিন সরকারের মন্ত্রী ভি সেন্থিল বালাজি। ছবি: সংগৃহীত।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ না করেই জেলবন্দি মন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবি। নিয়োগে দুর্নীতি ও আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে জেলবন্দি স্ট্যালিন সরকারের মন্ত্রী ভি সেন্থিল বালাজি। বৃহস্পতিবার সেন্থিলের মন্ত্রিপদ খারিজ করে দিয়েছেন রাজ্যপাল। যা তামিল রাজনীতিতে ‘নজিরবিহীন’ ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনাকে ঘিরে দক্ষিণের এই রাজ্যে রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সরকারের সংঘাত চরমে পৌঁছল। সূত্রের খবর, রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে স্ট্যালিন সরকার।
নিয়োগে দুর্নীতি ও আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে মন্ত্রী সেন্থিলের বাড়িতে হানা দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। প্রায় ১৮ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পরে গত ১৪ জুন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সেন্থিল বুকের ব্যথায় কাঁদতে শুরু করলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁর করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে দ্রুত বাইপাস সার্জারির পরামর্শ দেন। গত বুধবার সেন্থিলকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। আগামী ১২ জুলাই পর্যন্ত তাঁকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ুর রাজভবনের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আর্থিক তছরুপ-সহ একাধিক গুরুতর দুর্নীতির মামলায় বিচারাধীন বালাজি।
এক জন মন্ত্রী হয়ে পদের অপব্যবহার করে তদন্তকে প্রভাবিত করছেন। আইন এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা তৈরি করছেন। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল।’’ সাধারণত, কোনও মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরাতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে রাজ্যপাল সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করেই ‘একতরফা’ ভাবে দলের মন্ত্রীকে সরানোয় ক্ষোভপ্রকাশ করেছে ডিএমকে সরকার। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, ‘‘এক জন মন্ত্রীকে সরানোর কোনও অধিকার নেই রাজ্যপালের। আমরা আইনি পথে যাব।’’ রাজ্যপালের সঙ্গে স্ট্যালিন সরকারের সংঘাত অবশ্য নতুন নয়। রাজ্যপালের ‘অসাংবিধানিক’ আচরণ নিয়ে গত বছর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে পিটিশন দিয়েছিল ডিএমকে।
তামিলনাড়ুর এই ঘটনা মনে করিয়েছে বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেও। প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিবাদ তুঙ্গে উঠেছিল। বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গেও নানা বিষয়ে নবান্নের সংঘাতের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগে এই রাজ্যের মন্ত্রীও জেলবন্দি। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। অবশ্য পার্থের গ্রেফতারের পর তাঁকে মন্ত্রিপদ থেকে সরান খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তবে গ্রেফতারির পর সেন্থিলকে মন্ত্রিপদ থেকে সরাননি মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন। দফতরহীন অবস্থায় সেন্থিলকে মন্ত্রিপদে বহাল রেখেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সেন্থিলের মন্ত্রিপদ কেড়ে নিলেন রাজ্যপাল।
সেন্থিলের গ্রেফতারি নিয়ে সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিজেপি বিরোধী নেতারা। ডিএমকে মন্ত্রীর গ্রেফতারিকে ‘বিজেপির বেপরোয়া পদক্ষেপ’ এবং ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে আক্রমণ করেছিলেন মমতা। সরব হয়েছিলেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা, এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলেরা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হতে গত ২৩ জুন পটনায় বিরোধীদের বৈঠক হয়েছিল। আগামী বৈঠক বেঙ্গালুরুতে ১৩ জুলাই। তার আগে তামিল রাজনীতিতে রাজ্যপালের এ হেন পদক্ষেপে বিরোধী স্বর আরও জোরালো হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।