ভারতীয় মৎস্যজীবীদের উপর শ্রীলঙ্কা নৌসেনার দৌরাত্ম্য আচমকা বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। (প্রতীকী ছবি)
মাঝ সমুদ্রে ফের শ্রীলঙ্কা নৌসেনার গুলিতে মৃত্যু হল ভারতীয় মৎস্যজীবীর। জখম হয়েছেন আরও এক জন। মৃতদেহ উপকূলে পৌঁছতেই প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তামিলনাড়ুতে। ভারত সরকার এবং শ্রীলঙ্কার সরকার পদক্ষেপ না করা পর্যন্ত মৃতদেহ গ্রহণ করা হবে না, জানিয়ে দেয় পরিবার। তবে নয়াদিল্লি অত্যন্ত দ্রুত পদক্ষেপ করেছে, সরাসরি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অবিলম্বে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে কলম্বো নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে।
তামিলনাড়ুর সরকারি সূত্র জানিয়েছে, কাটচাথিভু দ্বীপের কাছে মাছ ধরছিলেন বৃদগো নামে ওই মৎস্যজীবী। আচমকা গুলি চালায় শ্রীলঙ্কা নৌসেনা। বছর বাইশের বৃদগোর ঘাড়ে গুলি লাগে এবং তৎক্ষণাৎ তাঁর মৃত্যু হয়। আর এক মৎস্যজীবী শারনের পায়ে গুলি লাগে। বৃদগোর দেহ এবং জখম শারনকে নিয়ে শেষ রাতের দিকে তামিলনাড়ু সৈকতে ফেরেন মৎস্যজীবীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কাটচাথিভু দ্বীপের কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় হাজার দুয়েক ভারতীয় মৎস্যজীবী মাছ ধরছিলেন। শ্রীলঙ্কার নৌসেনা কোনও সতর্কবার্তা দেয়নি, কোনও ওয়ার্নিং শটও ফায়ার করা হয়নি। সবাইকে চমকে দিয়ে শ্রীলঙ্কার নৌসেনা আচমকা ফিশিং বোটগুলির দিকে গুলি চালাতে শুরু করে।
শ্রীলঙ্কা বলছে, তাদের নৌসেনায় মৎস্যজীবীদের উপর গুলি চালানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। তা হলে গুলি চালালো কে? তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলম্বো। (প্রতীকী ছবি)
রামেশ্বরমে বৃদগোর বাড়িতে মঙ্গলবার সকালে হাজার খানেক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। গোটা তামিলনাড়ুতেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীরা চিরকালই পরস্পরের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরেন এবং পরম্পরাগত ভাবেই তাঁরা সেই অধিকার ভোগ করেন বলে তামিল মৎস্যজীবীদের দাবি। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ই পালানীস্বামী মৎস্যজীবী হত্যার তীব্র নিন্দা করেছেন। শ্রীলঙ্কার নৌসেনার হাতে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের গ্রেফতার হওয়ার সংখ্যাও হঠাৎই বেড়ে গিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখে তিনি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে অন্তত ৮৫ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী এবং ১২৮টি ফিশিং বোট শ্রীলঙ্কার হেফাজতে রয়েছে। কূটনৈতিক ভাবে কলম্বোর উপর চাপ সৃষ্টি করে এই পরিস্থিতির নিরসন করুক নয়াদিল্লি, দাবি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর।
আরও পড়ুন: গুপ্তচর নয় তো! সীমান্তে সাড়ে ৩ কোটির পতাকা উড়তে দেখে পাক-আশঙ্কা
নয়াদিল্লি অবশ্য মৎস্যজীবী হত্যার খবর পেয়েই কূটনৈতিক ভাবে সক্রিয় হয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহের কাছেই উদ্বেগ ব্যক্ত করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কা অবশ্য প্রাথমিক ভাবে গুলিচালনার অভিযোগ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মৎস্যজীবীদের উপর গুলি চালানোর অনুমতি শ্রীলঙ্কার নৌসেনা তার কর্মীদের দেয় না। তবে যে অভিযোগ উঠেছে, তার সত্যতা খতিয়ে দেখতে নৌসেনা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে।