মধ্যমণি: দেশের নানা প্রান্তে ঘটে চলা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে অনশনে বসলেন দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল। মঙ্গলবার দিল্লির যন্তরমন্তরে প্রতিবাদে জড়ো হন কয়েকশো মহিলা। ছবি: পিটিআই।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলা একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে বসলেন দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল। ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি। হায়দরাবাদের তরুণী পশু-চিকিৎসককে গণধর্ষণের পরে পুড়িয়ে খুন ও রাজস্থানে ছ’বছরের শিশুকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে যন্তরমন্তরে আজ সরব হন কয়েকশো মহিলা। দিল্লি পুলিশ স্বাতীকে বলেছে, যন্তরমন্তর দ্রুত খালি করতে হবে।
স্বাতী জানান, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে ধর্ষণকারীদের যাতে ফাঁসি দেওয়া হয়, তা সুনিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন তিনি। দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, সব নাবালিকা এবং তরুণী নির্যাতিতার ধর্ষণকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক। হায়দরাবাদের তরুণীর ধর্ষণকারীদের ফাঁসি দেওয়া হোক। গত বছরও প্রতিবাদে বসেছিলাম। তার দশ দিনের মধ্যে সরকার আইন এনে বলেছিল, কোনও নাবালিকার ধর্ষককে ছ’মাসের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা হয়নি।’’ স্বাতী বলেন, ‘‘এখন আবার প্রধানমন্ত্রীকে ওই আইন কার্যকর করার কথা বলছি।’’ তিনি চান, ক্ষমাভিক্ষার আর্জির ক্ষেত্রেও সময় বেঁধে দেওয়া হোক। তাঁর ক্ষোভ, দিল্লিতে ৬৬ হাজার পুলিশ এবং ৪৫টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের ঘাটতি রয়েছে। এই সব তথ্য দিয়ে মোদীকে কয়েকশো চিঠি লিখলেও একটিরও জবাব মেলেনি।
ধর্ষণকারীদের ‘জনসমক্ষে পিটিয়ে মারা উচিত’ বলে রাজ্যভায় গত কাল মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চন। আজ বিজেপি সাংসদ হেমা মালিনী সংসদ চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘প্রতিদিনই কোনও না কোনও মহিলাকে হেনস্থা করা হচ্ছে। আমার মতে, দোষীদের সব সময়ে জেলেই রেখে দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: ‘ধর্ষণে জড়িতদের স্থায়ী ভাবে জেলে বন্দি করা হোক’, তেলঙ্গানা কাণ্ডে মন্তব্য হেমামালিনীর
এক বার তারা জেলে ঢুকলে মুক্তি দেওয়ার প্রশ্নই নেই।’’ মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কৌর বাদলও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ধর্ষণের মামলার বিচার নির্যাতিতার বয়স মিলিয়ে হওয়া উচিত। অর্থাৎ নির্যাতিতার বয়স যদি ২০ হয়, বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ২০ দিনের মধ্যে। এতে নির্যাতিতার বয়স যত কম হবে, বিচার তত দ্রুত হবে।’’
সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, হায়দরাবাদের ঘটনার পর থেকে কয়েক দিনে গুগলে শুধু সার্চ হয়েছে, ‘হায়দরাবাদ রেপ ভিডিয়ো’, ‘হায়দরাবাদ গ্যাং রেপ ভিডিয়ো’। এই ধরনের শব্দ দিয়ে সার্চের প্রবণতা দেখা গিয়েছে। কোন ভৌগোলিক এলাকা থেকে এই ধরনের খোঁজ চলেছে, তা-ও বুঝতে পারেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, কাঠুয়া ধর্ষণ ও খুনের সময়েও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এ বার হায়দরাবাদ ও রাজস্থানে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে দেশ জুড়ে যখন নিন্দার ঢেউ, তখন এ দেশেরই একটি অংশ ধর্ষণের নৃশংস ভিডিয়ো খুঁজতে ব্যস্ত। সমাজতত্ত্ববিদদের একাংশের মতে, এ দেশে যৌনতা নিয়ে রাখঢাক। তাই এই ধরনের ভিডিয়ো দেখে লালসা চরিতার্থ করার প্রবণতা বাড়ে।