ফাইল চিত্র।
আয়ের দিক থেকে নীচের সারির শতকরা ৬০ ভাগ মানুষের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সে কথা ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিলেন আরএসএস-এর তাত্ত্বিক নেতা স্বামীনাথন গুরুমূর্তি। অভিজিতের যুক্তি ছিল, হাতে টাকা পেলে গরিব মানুষ লকডাউনের ধাক্কা সামলে উঠতে পারবেন। বাজারে চাহিদা বাড়লে অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ডে মোদী সরকারের মনোনীত সদস্য গুরুমূর্তির পাল্টা প্রশ্ন, নোবেলজয়ী থেকে সকলেই বলছেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরও খরচ করতে হবে। কিন্তু তার টাকা কোথা থেকে আসবে?
আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন বলেছেন, মোদী সরকারের ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজে কিছু ভাল দিক আছে। কিন্তু অনেক খামতিও রয়েছে। রঘুরামের মতে, ‘‘এই প্যাকেজ যেখানে ব্যর্থ, তা হল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই বা স্টিমুলাস নেই।’’ গরিব মানুষ, পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরাহা মিলেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রঘুরামের যুক্তি, ‘‘আরও টাকা দিতে হবে হাতে। পরিযায়ী শ্রমিক তো বটেই। আড়াই মাস লকডাউনে থাকা সাধারণ মানুষকেও। শুধু রেশনের চাল-ডাল দিলে হবে না। রান্না করতে আরও কিছু লাগে। মাথার উপরে ছাদ লাগে। টাকা দিলেই ভাল হয়।’’
প্রধানমন্ত্রীর ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের পরেই অভিযোগ উঠেছিল, কেন্দ্রীয় সরকার নিজের পকেট থেকে বিশেষ টাকা খরচ করেনি। গরিব মানুষের হাতে টাকাও তুলে দেওয়া হয়নি। কাগজে-কলমে জিডিপি-র ১০ শতাংশ প্যাকেজ হলেও বাস্তবে সরকারি খরচ ১ শতাংশের আশেপাশে। কিন্তু সেই টাকা আসবে কোথা থেকে প্রশ্ন তুলে গুরুমূর্তির যুক্তি, সরকারের তিন জায়গা থেকে টাকা আসে। এক, কর আদায়। দুই, সম্পত্তি বিক্রি। তিন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ধার দিতে পারে। কিন্তু এফআরবিএম আইনের ফলে সেই রাস্তা বন্ধ। গুরুমূর্তি নিজেও এর আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা ছাপানোর পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, এফআরবিএম আইনে রাজকোষ ঘাটতি বাড়িয়ে বাড়তি ধার করার ব্যবস্থা রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঘুরপথেও টাকা ছাপিয়ে সরকারকে টাকা ধার দিতে পারে। রঘুরাম বলেন, ‘‘আমরা অবশ্যই টাকা খুঁজে বের করতে পারি। সব থেকে যাঁদের টাকা দরকার, তাঁদের জন্য করতেই হবে। তার জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকা দরকার নেই। এর জন্য অনেক কম টাকা দরকার।’’ রঘুরাম আগেই বলেছিলেন, গরিবদের সুরাহা দিতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা দরকার।