(বাঁ দিক থেকে) উদ্ধব ঠাকরে এবং অভিমুক্তেশ্বরানন্দ। ছবি: সংগৃহীত।
সরাসরি নাম না করে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে এবং তাঁর সহযোগী বিজেপি নেতৃত্বকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বললেন উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষপীঠের ৪৬তম শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ। সোমবার মুম্বইয়ে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বাসভবন মাতোশ্রীতে গিয়েছিলেন অভিমুক্তেশ্বরানন্দ। সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘উদ্ধব বিশ্বাসঘাতকতার শিকার। তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে না ফেরা পর্যন্ত সেই ক্ষতের উপশম হবে না।’’
এর পরে বিজেপি এবং শিন্ডেকে খোঁচা দিয়ে শঙ্কারচার্যের মন্তব্য, ‘‘আমরা হিন্দু ধর্মের অনুসারী এবং পাপ ও পুণ্যে বিশ্বাস করি। সবচেয়ে বড় পাপ হল বিশ্বাসঘাতকতা। উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুন মাসে শিবসেনায় ভাঙনের পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিদ্রোহী বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে বিজেপির সাহায্যে উদ্ধবকে সরিয়ে সরকার গড়েছিলেন শিন্ডে। উদ্ধবের বালাসাহেব ঠাকরের প্রতিষ্ঠা করা শিবসেনার নাম আর তির-ধনুক প্রতীকও নির্বাচন কমিশনের রায়ে শিন্ডের করায়ত্ত হয়েছিল।
সোমবার শিন্ডেসেনা, বিজেপির সেই ক্ষমতাদখল প্রক্রিয়াকে ‘অন্যায়’ বলে চিহ্নিত করে শঙ্করাচার্য বলেন, ‘‘ওই যন্ত্রণা সারা মহারাষ্ট্রের।’’ প্রসঙ্গত, গত ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন করার ঠিক আগে অভিমুক্তেশ্বরানন্দ বলেছিলেন, ‘‘রামমন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান শাস্ত্র না মেনেই করা হচ্ছে। অযোধ্যায় যে ঈশ্বরকে সে দিন প্রতিষ্ঠা করা হবে তাঁর মাথা, চোখ, চুল— কিছুই নেই!’’ সে সময় অভিমুক্তেশ্বরানন্দের বক্তব্য সমর্থন করে পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী বলেছিলেন, ‘‘রামমন্দিরকে উপলক্ষ করে ধর্ম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আচরণ উন্মাদের লক্ষণ।’’
সম্প্রতি অষ্টাদশ লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীর প্রথম বক্তৃতাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি নেতারা ‘হিন্দুবিরোধী’ বলে চিহ্নিত করতে চাইলেও অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরাসরি তা খারিজ করেছিলেন, বিজেপির অভিযোগ ছিল, রাহুল গোটা হিন্দু সমাজকে ‘হিংস্র’ বলেছেন। যদিও রাহুল এবং কংগ্রেসের দাবি, হিন্দু সমাজ নয়, বিজেপির উদ্দেশে ওই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বিজেপি গোটা হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না বলেও দাবি করেছিলেন রাহুল।
বস্তুত, লোকসভায় বিজেপি বেঞ্চের দিকে ইঙ্গিত করে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা নিজেদের হিন্দু বলেন, তাঁরাই সারা দিন বিদ্বেষ ছড়ান।’’ বিরোধী দলনেতার পাশে দাঁড়িয়ে গত সপ্তাহে জ্যোতিষপীঠের শঙ্করাচার্য বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী বলেছেন, হিন্দু ধর্মে হিংসার কোনও স্থান নেই। তাঁর মন্তব্য বিকৃত করা হচ্ছে। বেছে বেছে বক্তৃতার কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে।’’ এ বার সরাসরি বিজেপি এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুললেন শঙ্করাচার্য।