বন্ধুত্বের হাতটা ভারতই প্রথম বাড়িয়ে দিতে চাইল। এই উপমহাদেশে শান্তির জন্য। দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তোলার লক্ষ্যে। আগামী বছরেই পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৫ বছর পর এই প্রথম কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন পাকিস্তানে। ‘সার্ক’ জোটের সম্মেলনে যোগ দিতে।
এ দিকে, ইসলামাবাদে গিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আজ, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। জোর দিয়েছেন ভারতীয় উপমহাদেশ সহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার ওপরেও। আর সেই লক্ষ্যে আগামী বছরেই পাকিস্তান, চিন, আফগানিস্তান সহ এশিয়ার অন্য দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানালেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এ-ও জানালেন, ‘‘শুরুটা ভারতের প্রধানমন্ত্রীই করছেন। আগামী বছরেই যাচ্ছেন পাকিস্তান সফরে। ‘সার্ক’ সম্মেলনে যোগ দিতে। ওই সময় আমিও আসব প্রধানমন্ত্রীজীর সঙ্গে।’’ ২০০৪ সালে ‘সার্ক’ জোটের সম্মেলনে যোগ দিতেই ইসলামাবাদে গিয়েছিলেন ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী।
আফগানিস্তানের উন্নয়ন নিয়ে ইসলামাবাদে ‘হার্ট অফ এশিয়া সম্মেলনে’র পঞ্চম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ দিন ভারতের বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘দীর্ঘ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়ে আমরা এখন অনেক পরিণত হয়েছি। আমাদের আত্মবিশ্বাসও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। আমরাই প্রস্তাব দিচ্ছি, দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তোলার জন্য যা যা করণীয়, তা করা হোক। সেটা যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই ভাল। তবে আমাদের কোনও তাড়াহুড়ো নেই। পাকিস্তান তার জন্য যতটা সময় চায়, আমরা সেই সময় দিতে রাজি আছি। দক্ষিণ এশিয়ায় সবকটি দেশের মধ্যেই পণ্যের আদানপ্রদান ও ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তার জন্য যে সব বাধা রয়েছে, সেগুলি সরানোর জন্য এই অঞ্চলের সবকটি দেশকেই আন্তরিক ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’’
পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তান থেকে ভারতে পণ্য আসার ব্যাপারে ইসলামাবাদ যাতে আপত্তি না করে, তার জন্যও এ দিন অনুরোধ জানান ভারতের বিদেশমন্ত্রী।
আফগানিস্তান নিয়ে ‘হার্ট অফ এশিয়া সম্মেলনে’র পঞ্চম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে গত কালই ইসলামাবাদে পৌঁছন ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ওই সম্মেলনে ১৭টি দেশ অংশ নিয়েছে। অতিথিদের সম্মানে দেওয়া নৈশভোজে কাল ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বেশ কিছু ক্ষণ আলোচনা হয় পাক বিদেশমন্ত্রী সরতাজ আজিজের। পরে ওই সম্মেলনে সুষমার পাশের আসনটিতে বসে থাকতে দেখা য়ায় পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীকে। তিন বছর পর এই প্রথম ভারতের কোনও বিদেশমন্ত্রী গেলেন ইসলামাবাদে।
আজ সম্মেলন চলার সময়ে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গেও আলাদা ভাবে কথা বলেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। সূত্র্রের খবর, কাশ্মীরের মতো কয়েকটি বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে তাঁদের আলোচনা হয়েছে।
সুষমা বলেছেন, ‘‘দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে আর সেই প্রয়াসকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই আমি ইসলামাবাদে এসেছি। এ ব্যাপারে আমি পাক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলব।’’
রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কি ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ‘বরফ’ কিছুটা গলালো?
কিছু দিন থমকে থাকার পর মূলত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগেই দিন তিনেক আগে দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক হয় ব্যাঙ্ককে। সেই বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীর, সীমান্ত-সমস্যা, সন্ত্রাস দমনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে ঘণ্টা চারেকের বৈঠক হয় দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে। পরে তা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে যৌথ বিবৃতিও দেওয়া হয়।