ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিহারের উন্নয়ন হবে, বিহারিদের কাজের সুযোগ হবে বলে দাবি করলেন বিহার বিজেপির শীর্ষ নেতা সুশীল মোদী। তার এই মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, গত প্রায় পনেরো বছর ধরে বিহারে এনডিএ-র সরকার রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে রয়েছে ডবল ইঞ্জিন সরকার। তাও বিহারের উন্নতির প্রশ্নে কেন পশ্চিমবঙ্গের দিতে তাকিয়ে রয়েছেন বিহারের ওই নেতা! মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের সঙ্গে তিন পর্বে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বে থাকা সুশীল মোদী চতুর্থ দফায় মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। প্রশ্ন, সেই কারণেই কি বেসুরে বাজলেন ওই নেতা ?
অতীতে বিহার থেকে কাজের খোঁজে বড় সংখ্যক মানুষ কলকাতায় আসতেন। স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে সেই ছবিটি পাল্টাতে থাকে। গত দু-তিন দশকে বিহারের মানুষ রোজগারের খোঁজে পূর্ব দিকে যাওয়ার পরিবর্তে পশ্চিমে দিল্লি-হরিয়ানা মুম্বইয়ে যেতে শুরু করে। সুশাসনের দাবি করা নীতীশ কুমার ও জোট-সঙ্গী বিজেপির সরকার থাকা সত্ত্বেও গত পনেরো বছরে বিহারে চাকরির পরিবেশ যে তৈরি হয়নি, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে লকডাউন। লকডাউনের সময়ে যে রাজ্যগুলিতে সব চেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন, তাদের বড় সংখ্যক হলেন বিহারের।
এই পরিস্থিতিতে গত কাল সুশীল মোদীর মন্তব্য সম্পর্কে বিজেপি শিবিরের ব্যাখ্যা, সোনার বাংলা গড়া হলে শুধু বিহারের কেন পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্য ঝাড়খণ্ড, ওড়িশারও লাভ হবে। কারণ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে গোটা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বন্দরকে আরও ভাল ভাবে ব্যবহার করে বাণিজ্য বিস্তার ঘটানো সম্ভব। যে ভাবে পশ্চিমে জলপথে বাণিজ্যের প্রশ্নে গুজরাত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, তেমনি পূর্ব দিকে একই ভূমিকা নিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ।
আর কাজের প্রশ্নে বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গে এখনও বিহারের বহু মানুষ বাস করেন। বিশেষ করে চটকল এলাকাগুলিতে এখনও হিন্দিভাষীরা রয়ে গিয়েছেন। তারা এখন সে রাজ্যের ভূমিপুত্রেই পরিণত হয়েছেন। বিজেপি ক্ষমতায় এসে রাজ্যে শিল্পায়নের পরিবেশ তৈরি করলে, পুরনো চটকলগুলিকে বাঁচিয়ে তুললে বিহারিদের কাছেও কাজের সুযোগ খুলে যাবে। নিজের টুইটের মাধ্যমে সে কথাই বোঝাতে চেয়েছেন মোদী। বিহার বিজেপির এক নেতার কথায়, সুশীল মোদী কোথাও বলেননি, ‘সোনার বাংলা’ হলে বিহারের মানুষ সেখানে কাজ করতে যাবেন। বিহারে এখন প্রচুর কাজের সুযোগ। তাই লকডাউনে যারা ফিরে এসেছিলেন, তাদের বড় সংখ্যকই আর কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে না-গিয়ে এখানে থেকে গিয়েছেন।
বিজেপি ওই ব্যাখ্যা দিলেও, তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তব্য এ হল আসলে বিজেপির বাংলা লুঠের ছক। রাজ্যে তেল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, বীরভূমে পাওয়া গিয়েছে বড় মাপের কয়লা খনি। সে সব লুঠ করতেই এখন ছক কষছেন বিজেপির নেতারা। আর গোটা দেশেই মূলত শ্রমিক বলতে বিহারের মানুষদের ধরা হয়ে থাকে। ডবল ইঞ্জিনের সরকার হয়েও বিহারের সরকার তাদের রাজ্যের মানুষের শ্রমিকের দুর্দশা ঘোচাতে ব্যর্থ। তাই এখন বাংলার সাহায্য প্রয়োজন বলে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতারা।