সুশান্ত সিংহ রাজপুত।
মুম্বই, ২০ অগস্ট: মহারাষ্ট্র সরকার সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করবে। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই কথা জানালেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র প্রধান শরদ পওয়ার। তবে একই সঙ্গে সিবিআইকে ঘুরিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি তিনি।
মহারাষ্ট্রের মহা বিকাশ আগাড়ি জোট সরকারের অন্যতম শরিক দল এনসিপি। দলের নেতা অনিল দেশমুখ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনিও এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, মুম্বই পুলিশ ঠিক মতো তদন্ত চালাচ্ছিল। আমরা শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। মুম্বই পুলিশ সিবিআইকে তদন্তে সব রকম সাহায্য করবে।’’
দলের তরফে সিবিআইকে রাজ্যে ‘স্বাগত’ জানালেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলকে কটাক্ষ করেছেন এনসিপি প্রধান। পওয়ার আজ টুইট করেন, ‘‘আমি নিশ্চিত যে, মহারাষ্ট্রের মহা বিকাশ আগাড়ি সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দেবে। তবে এ-ও আশা করি যে, যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকরের মৃত্যুর তদন্ত সিবিআই যে ভাবে করেছিল, এ বার সে রকম হবে না।’’ দাভোলকরকে ২০১৩-র ২০ অগস্ট পুণেতে গুলি করে মারা হয়। ২০১৪-এ তদন্তের ভার দেওয়া হয় সিবিআইকে। এখনও তার কোনও কিনারা হয়নি।
আরও পড়ুন: সুশান্ত-আবেগ উস্কে দিতেই বিহারে দেবেন্দ্র
তবে মহারাষ্ট্র সরকারের প্রধান শরিক দল শিবসেনা সিবিআই তদন্ত নিয়ে তাদের অস্বস্তি আজও গোপন রাখেনি। দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’র সম্পাদকীয়তে আজ লেখা হয়েছে, ‘‘বিহার পুলিশের এক জন অফিসারকে কোয়রান্টিনে পাঠালেই যদি মুম্বই পুলিশের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করা হয়, তা হলে ভারতীয় সংবিধানের আজ চোখের জল ফেলা উচিত। সুপ্রিম কোর্টও মুম্বই পুলিশের তদন্তে কোনও ত্রুটি পায়নি। এত দিন ধরে তদন্ত চালিয়ে মুম্বই পুলিশ প্রায় নিষ্পত্তি করে ফেলেছিল। তখনই সিবিআইকে তদন্তের ভার দেওয়া হল। এটা মুম্বই পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’’ এই সম্পাদকীয়তে সিবিআইয়ের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘বিহারে বেশ কিছু তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। কিন্তু কত জন অপরাধীই বা ধরা পড়েছে?’’ শিবসেনার মতে, ‘‘সিবিআই তদন্ত চালাতেই পারে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা যে বিহার পুলিশ বা সিবিআই-ই এই মামলার নিষ্পত্তি করতে পারবে। এটা আসলে রাজ্যের এক্তিয়ারে নাক গলানো। এক জন বিহারের বাসিন্দা মামলা করলেন বলে বিহার পুলিশ মুম্বই এসে তদন্ত শুরু করে দিল। এ বার পশ্চিমবঙ্গের কোনও বাসিন্দা এই সংক্রান্ত মামলা করলে কি কলকাতা পুলিশও তদন্তে নামবে? এটা তো রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করা।’’
আরও পড়ুন: ‘১৭০ কোটি লাভ, তিরুঅনন্তপুরম তবু কেন আদানির’
মুম্বই পৌঁছনো মাত্রই বিহার পুলিশের আইপিএস অফিসারকে কোয়রান্টিনে পাঠিয়েছিল বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি)। আজ বিএমসি কমিশনার ইকবাল খান জানান, সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা যদি সাত দিন বা তার কম সময়ের জন্য এ রাজ্যে আসেন, তা হলে তাঁদের কোয়রান্টিন থেকে ছাড় দেওয়া হবে। তবে তাঁরা যদি সাত দিনের বেশি থাকার পরিকল্পনা করেন, তা হলে তাঁদের ই-মেল করে বিএমসি-র কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। ‘‘ই-মেলে অনুমতি চাইলেই আমরা তা দিয়ে দেব,’’ আশ্বাস দিয়েছেন ইকবাল।
আরও পড়ুন: নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে সময় ভূষণকে
দেশের শীর্ষ আদালত সুশান্তের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তে সায় দেওয়ার পরেও প্রয়াত অভিনেতার পরিবারের সঙ্গে তাঁর বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর টানাপড়েন অব্যাহত। আজ সুশান্তের বাবা কৃষ্ণকিশোর সিংহের আইনজীবী বিকাশ সিংহ ফের অভিযোগ করেন, ‘‘রিয়া আসলে এক দু’মুখো সাপ। এক এক বার এক-এক রকম কথা বলে। তাঁর আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেছেন, রিয়া নিজেও সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন। কিন্তু আদতে ব্যাপারটা সে রকম নয়। সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময়ে রিয়ার আইনজীবী সমানে সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে সওয়াল করে মুম্বই পুলিশই তদন্ত চালিয়ে যাক, এই সুপারিশ করে গিয়েছিলেন।''