প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের জেরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমবে। নানা বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সমীক্ষাও দাবি করেছে, ওই সিদ্ধান্ত মানুষের কেনার ঝোঁক টেনে নামানোয় চাহিদা কমছে। ফলে মার খাচ্ছে ব্যবসা।
এ বার স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র (এসবিআই) গবেষণা সংস্থার সমীক্ষাও বলছে, ব্যবসার উপর ভালই কোপ ফেলেছে এই সিদ্ধান্ত। তাদের সমীক্ষায় ৬৯% ব্যবসায়ীই জানাচ্ছেন, ব্যবসা কমেছে। রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছে নির্মাণ ও অসংগঠিত ক্ষেত্র।
গত ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই ঘোষণা করে দাবি জানান, এর ফলে কালো টাকার হদিস মিলবে। এ জন্য ৫০ দিন সময় চেয়েছিলেন তিনি। সেই সময়সীমা শেষের অনেক আগে থেকেই অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন, অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতো ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এই সিদ্ধান্তের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিরোধী নেতাদের দাবি, লাভ তো দূরের কথা, এতে আখেরে দেশের অর্থনীতির ক্ষতিই হবে। যার ফল ভুগতে হবে সাধারণ মানুষকেই। শিল্পমহল প্রকাশ্যে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না-করলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই ব্যবসা মার খাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্পের একটি বড় অংশই বিক্রিবাটা কমে যাওয়ায় ঝাঁপ বন্ধ করার কথা জানায়।
নোট বাতিলের প্রভাব বুঝতে মুম্বই ও পুণের ১৭৫টি সংগঠিত ও অংসগঠিত সংস্থাকে নিয়ে সম্প্রতি সমীক্ষা চালায় এসবিআই-এর গবেষণা সংস্থা ইকনমি রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট (ইআরডি)। সমীক্ষায় ব্যবসায়ীদের ৬৯ শতাংশই তাঁদের ব্যবসায় প্রভাব পড়ার কথা জানিয়েছেন। সার্বিক ভাবে তাঁদের ব্যবসা মার খেয়েছে ৫০ শতাংশের কম। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছিল নির্মাণ ক্ষেত্রের এবং রাস্তার ধারে পণ্য বিক্রি করে এমন অসংগঠিত ক্ষেত্রের। তাঁদের বেশিরভাগই জানিয়েছে, ব্যবসা কমেছে ৫০%-এরও বেশি। বস্ত্রশিল্পে যাঁরা খুচরো ব্যবসায় যুক্ত, তাঁদের অবস্থা পাইকারি ব্যবাসায়ীদের চেয়ে বেশি খারাপ। ব্যবসা কমেছে গয়না শিল্পেরও। তবে গাড়ি বা ওযুধ শিল্প, যাদের কাছে ডিজিটাল প্রযুক্তির লেনদেনের সুবিধা ছিল, তাদের উপর কম প্রভাব পড়েছে। বিয়ের মরসুমে পণ্যের চাহিদাও কমেছে বলে জানিয়েছে ওই সমীক্ষা। হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জরি শিল্পীরাও আগেই জানিয়েছিলেন, অনেক বিয়ের বরাত বাতিল হয়েছে। ২০০০ টাকার নোট ছাড়া নিয়েও আমজনতার মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। ইআরডি-র সমীক্ষাতেও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ২০০০ টাকার নোট বেশি করে বাজারে ছাড়ায় আরও ভোগান্তি বাড়ে।
তবে ওই সমীক্ষাতেই বলা হয়েছে, ৬৩% ব্যবসায়ী নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থনও করেছেন। দেখা গিয়েছে, নগদ লেনদেনের ১৫% (দু’মাসে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা)ডিজিটালে বদলে গিয়েছে। তবে ডিজিটাল লেনদেন করতে গিয়ে সংযোগের সমস্যায় পড়েছেন, বেশ কিছু এমন ব্যবসায়ীও রয়েছেন।