সুরাত পুলিশের সঙ্গে অভিযুক্ত মহিলা। ছবি: সংগৃহীত।
রবিবার আড়াই বছর বয়সি শিশুপুত্রকে খুন করে দেহ লোপাটের অভিযোগে এক মহিলা গ্রেফতার। গুজরাতের সুরাতের ডিন্ডোলি এলাকার এই ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত ওই মহিলা সেখানকার একটি নির্মাণস্থলের শ্রমিক হিসাবে কর্মরতা। অভিযুক্তের নাম নয়না মাণ্ডবী। রবিবার সুরাত পুলিশ খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে নয়নাকে। পুলিশ সূত্রে খবর, শিশুপুত্রকে খুন করার পর নয়না নিজে থেকেই থানায় তাঁর ছেলের নামে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলেন। এমনকি তাঁর ছেলেকে কেউ অপহরণ করে নিয়েছেন, সেই অভিযোগও এনেছিলেন তিনি।
টানা তিন দিন ধরে অসত্য তথ্যপ্রদান করার পর শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। নয়নার অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তদন্তে নেমেছিল পুলিশ। এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখার সময় পুলিশ লক্ষ করে, নয়না তাঁর ছেলেকে নিয়ে নির্মাণস্থলে প্রবেশ করলেও সেখান থেকে তাঁর ছেলে কোথাও বার হয়নি। তার পরেই সন্দেহ জাগে পুলিশের। নয়না পরে পুলিশের কাছে তাঁর প্রেমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। নয়নার দাবি, তাঁর প্রেমিক নাকি তাঁর ছেলেকে অপহরণ করেছেন। নয়নার অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তাঁর প্রেমিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাঁর দাবি, তিনি ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। সুরাতে কোনও কালেই যাননি বলেও দাবি করেন নয়নার প্রেমিক। নয়নার কথায় অসঙ্গতি লক্ষ করায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তার পর নিজে থেকেই সব স্বীকার করে নেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন পুলিশকে নয়না জানান, তিনিও মূলত ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। সেখানে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁর। দু’জনে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন নয়না। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে গেলে নয়নার সঙ্গে থাকতে পারবেন না বলেও জানিয়েছিলেন নয়নার প্রেমিক। পুলিশের কাছে এমনটাই দাবি করেন নয়না। তাই প্রেমিকের সঙ্গে থাকবেন বলে শিশুপুত্রকে খুন করেন তিনি। খুন করার পর যেন ধরা না পড়েন, তাই অজয় দেবগন অভিনীত ‘দৃশ্যম’ ছবিটিও দেখেন তিনি। ওই ছবিতে দেখানো হয়েছিল মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে রেখে কী ভাবে পুলিশকে অসত্য কথা বলে পার পেয়ে গিয়েছিলেন চরিত্রেরা।
‘দৃশ্যম’ ছবি দেখে নয়না ভাবেন, তিনিও একই ভাবে ধরা পড়ার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। নির্মাণ সংস্থার ভিতর একটি গর্ত খুঁড়ে ছেলের দেহ সেখানেই পুঁতে দেন নয়না। তার পর পুলিশের কাছে গিয়ে ছেলের নামে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, নয়না তাঁর ছেলের দেহ কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন, তা নিয়েও অসত্য বলেছেন তিনি। প্রথমে অন্য জায়গার হদিস দিয়ে নয়না দাবি করেছিলেন সেখানেই তিনি তাঁর ছেলের মৃতদেহ পুঁতে রেখেছেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে কোনও দেহ খুঁজে না পাওয়ায় আবার নয়নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার পর নয়না জানান, খুন করে পুকুরের জলে ফেলে দিয়েছেন তাঁর ছেলের দেহ। সেখান থেকেও শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার হয়নি। শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের সময় সঠিক তথ্য দেন নয়না। তিনি জানান, নির্মাণ স্থলের যে জায়গায় শৌচালয় তৈরি করা হচ্ছে, সেখানেই গর্ত খুঁড়ে তাঁর ছেলের দেহ পুঁতেছেন তিনি। সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয় শিশুর দেহ। পুলিশ আধিকারিক সূত্রে খবর, তদন্ত এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে, সেই আশ্বাসও দিয়েছে সুরাত থানার পুলিশ।