দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাংলো থেকে হিসাব-বহির্ভূত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত চেয়ে মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি রয়েছে। মামলাকারীর আবেদন, বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে এফআইআরের নির্দেশ দেওয়া হোক পুলিশকে। সুপ্রিম কোর্ট যে তিন সদস্যের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তার প্রয়োজনীয়তা নেই বলেও জানিয়েছেন মামলাকারীর আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হতে পারে।
আবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের বিচারপতিরা সকলেই সততা, পাণ্ডিত্য, শিক্ষা এবং স্বাধীনতার দিক থেকে সর্বোচ্চ স্তরের মানুষ। কিন্তু ঘুষ নিতে গিয়ে বিচারপতিদের হাতেনাতে ধরা পড়ার বিষয়গুলিও অস্বীকার করা যায় না। ১৯৯১ সালে কে বীরস্বামীর রায় এ সব ক্ষেত্রে তদন্তের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি, অতীতে বিচারপতির বিরুদ্ধে পকসো মামলাতেও এফআইআর করা যায়নি ওই রায়ের কারণে। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে এই রায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা আদতে দেশের সংবিধানের একটি অংশকে লঘু করে দিচ্ছে।’’
১৯৯১ সালের ওই রায় হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের কিছু সুরক্ষা প্রদান করে। তাতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির অনুমতি ছাড়া হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত শুরু করা যাবে না। বিচারপতি বর্মার ঘটনার প্রেক্ষিতে এই রায় সংশোধনের আর্জি জানানো হয়েছে শীর্ষ আদালতে। সেই সঙ্গে বিচারপতিদের স্তরে এই ধরনের দুর্নীতি এড়াতে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে বলেও জানিয়েছেন মামলাকারী।
বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে যে তিন সদস্যের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি খন্না, তাতে হিমাচল প্রদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি, পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং কর্নাটক হাই কোর্টের বিচারপতি রয়েছেন। তাঁদের রিপোর্ট দেখে বিচারপতি খন্না যদি মনে করেন, অভিযুক্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে তিনি পদক্ষেপ করতে পারেন।
গত ১৪ মার্চ রাতে দোলের ছুটি চলাকালীন বিচারপতি বর্মার সরকারি বাংলোতে আগুন লেগে গিয়েছিল। তা নেভাতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ নগদ টাকা বাংলো থেকে উদ্ধার করে দমকল বাহিনী। হিসাব-বহির্ভূত এই টাকা উদ্ধারের পর দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তাতে অভিযুক্ত বিচারপতির বক্তব্যও আছে। যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বিচারপতি বর্মা দাবি করেছেন, যে ঘর থেকে টাকা পাওয়া গিয়েছে, সেখানে বাইরের লোকজনেরও যাতায়াত ছিল। তার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।