তমসো মা.. ধর্মীয় কি না বলবে সাংবিধানিক বেঞ্চ

স্কুল শুরুর আগে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের হাত জোড় করে ‘অসতো মা সদ্‌গময়’ প্রার্থনা করতে হয়। এর মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কি না, তা সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ খতিয়ে দেখতে পারে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২১
Share:

—ফাইল চিত্র।

স্কুল শুরুর আগে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের হাত জোড় করে ‘অসতো মা সদ্‌গময়’ প্রার্থনা করতে হয়। এর মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কি না, তা সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ খতিয়ে দেখতে পারে। সুপ্রিম কোর্টে আজ বিচারপতি রোহিনটন নরিম্যানের নেতৃত্বে দুই বিচারপতির বেঞ্চ এই প্রশ্নকে ‘যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ’ বলে আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, এর ফয়সালা পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে হওয়া উচিত।

Advertisement

কেন্দ্রের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনেও দেশ জুড়ে ১১০০-র বেশি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় চলে। মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সংগঠনের চেয়ারম্যান। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দেন, সংস্কৃত মন্ত্র ‘অসতো মা সদ্‌গময়, তমসো মা জ্যোতির্গময়’ প্রার্থনার সঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই।

মেহতা বলেন, ‘‘এ তো সর্বজনীন সত্য। সব ধর্ম, সব বইয়েই এ কথা রয়েছে। সংস্কৃতে বলেই তা ধর্মীয় হতে পারে না। খ্রিস্টান স্কুলেও শেখানো হয়, সততাই সর্বোত্তম পন্থা। তা কি ধর্মীয় শিক্ষা? আমার তা মনে হয় না।’’ বিচারপতি নরিম্যান বলেন, ‘‘কিন্তু ‘অসতো মা সদ্‌গময়’ মন্ত্র সরাসরি উপনিষদ থেকে নেওয়া।’’

Advertisement

তা শুনে সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যেক বিচারপতির পিছনে যে লোগো থাকে, তাতে ভগবদ্‌গীতার মন্ত্র রয়েছে। সেই লোগোতে লেখা রয়েছে, ‘যতো ধর্মঃ, ততো জয়’। যার অর্থ, যেখানে ধর্ম, সেখানেই জয়। এর মধ্যে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক কিছু নেই।’’ বিচারপতি নরিম্যান বলেন, ‘‘সেটা আপনার যুক্তি হতে পারে। আপনি বৃহত্তর বেঞ্চে সে কথা বলবেন। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চেই এর ফয়সালা হওয়া উচিত।’’ এর পর প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

মধ্যপ্রদেশের আইনজীবী বিনায়ক শাহ সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে অভিযোগ তুলেছিলেন, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষা বিধিতে এই প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে। অম্বেডকরের মন্ত্রে দীক্ষিত একটি সংগঠনের সদস্য বিনায়ক নিজে নাস্তিক। তাঁর বক্তব্য, এক বন্ধু, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের হয়েই তিনি এই মামলা করেছেন। কারণ, তিনি নিজে কর্মচারী বলে মামলা করা মুশকিল। তাঁর যুক্তি, প্রার্থনার শুরুতে ‘ওঁ’ উচ্চারণের মাধ্যমে ভগবানের প্রতি ধর্মীয় বিশ্বাস শেখানো হচ্ছে। এতে রোজকার সমস্যা মোকাবিলায় বাস্তববাদী সমাধান না খুঁজতে বলে ভগবানের উপর ভরসা করতে শেখানো হয়। একই ভাবে প্রার্থনার শেষে ‘ওঁ স্বাহা নভভাতু’ পাঠ করানো হয়। এতে বিজ্ঞানমনস্কতা নষ্ট হয়। নাস্তিক ও অন্য ধর্মের মানুষদের এতে সমস্যা থাকতে পারে।

কেন্দ্র কোর্টে এর বিরোধিতা করলেও হলফনামায় জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের প্রার্থনার সঙ্গে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কোনও সম্পর্ক নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement