সোমবার বিজেপি তথা সরকার পক্ষ এবং শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোটের যুক্তি, পাল্টা যুক্তি শোনে সুপ্রিম কোর্ট।
মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আস্থাভোট কি ৩০ নভেম্বর, শনিবারের আগেই হবে? নাকি তা আরও পিছিয়ে যাবে? গত শনিবার সাতসকালে যে ভাবে তড়িঘড়ি দেবেন্দ্র ফডণবীসকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল, সে প্রক্রিয়া কি সাংবিধানিক ভাবে বৈধ? জানা যাবে আগামিকাল। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ বিষয়ে রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট।
সোমবার প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে বিজেপি তথা সরকার পক্ষ এবং শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোটের যুক্তি, পাল্টা যুক্তি শোনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রমণ, বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ। আগামিকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রায় ঘোষণা করা হবে।
এ দিন সকালে শীর্ষ আদালতে বিজেপি দাবি করে, তাদের কাছে ১৭০ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। অন্য দিকে, শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোটের পাল্টা দাবি করে, তাদের জোটকে সমর্থন করছেন বেশির ভাগ বিধায়ক। দু’পক্ষই আদালতে নিজেদের দাবির স্বপক্ষে চিঠি ও তথ্যপ্রমাণ জমা দিয়েছে। আদালতে তথ্য জমা দেওয়া ছাড়াও এ দিন সকালে মহারাষ্ট্র রাজভবনে গিয়েও জোটের পক্ষে সরকার গড়ার দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস-এনসিপির শীর্ষ নেতারা। অন্য দিকে, এ দিন নিজের দফতরে গিয়ে কাজে যোগ দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রের আঁচ সংসদে, ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ লোকসভায় বললেন রাহুল, ভিতরে বাইরে বিক্ষোভ কংগ্রেসের
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ শুরু করলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। ছবি: পিটিআই।
কংগ্রেস নেতা অশোক চহ্বাণ জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার বেশি বিধায়কদের সমর্থন রয়েছে, প্রমাণস্বরূপ সে চিঠি রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারীর কাছে জমা দিয়েছেন। তবে মহারাষ্ট্রে সরকার গড়া নিয়ে এর পর কী হতে চলেছে, তা জানা যাবে আগামিকাল শীর্ষ আদালতের রায় ঘোষণার পর।
তবে সুপ্রিম কোর্টে জোটের যে রিট পিটিশন নিয়ে শুনানি হচ্ছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির আইনজীবী মুকুল রোহতগি। জোটের পক্ষে ওই রিট পিটিশনে আবেদন করা হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আস্থাভোট করা হোক। তবে মুকুলের প্রশ্ন, ৩০ নভেম্বর আস্থাভোটের দিন ধার্য করা সত্ত্বেও রাজ্যপালের সে নির্দেশ নিয়ে আদালত কেন হস্তক্ষেপ করছে? তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলি বা নেতারা যে ভাবে নিজেদের অবস্থান বদল করছেন, তাতে ভবিষ্যতে কী হবে, তা রাজ্যপালের পক্ষে কী করে বোঝা সম্ভব?’’
আরও পড়ুন: জয়প্রকাশকে বেধড়ক মার, লাথি মেরে ফেলা হল ঝোপে, অভিযুক্ত তৃণমূলের দাবি গোটাটাই নাটক
অন্য দিকে সরকার পক্ষের আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার দাবি, ‘‘২২ নভেম্বর ৫৪ জন এনসিপি বিধায়কের স্বাক্ষর করা চিঠি রাজ্যপালের কাছে জমা দেন অজিত পওয়ার। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, মহারাষ্ট্রে স্থায়ী সরকার গঠনের জন্য আমরা দেবেন্দ্র ফডণবীসকে সমর্থনের কথা জানিয়েছি।’’ তুষার মেহতার যুক্তি, এর পরেই রাজ্যপাল কোশিয়ারী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে সরকার গ়ড়ার আমন্ত্রণ জানান।
তবে সরকার পক্ষের যুক্তি খণ্ডন করে শিবসেনা ও কংগ্রেস-এনসিপি জোটের তরফে আইনজীবী যথাক্রমে কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির প্রশ্ন, কোন যুক্তিতে সাতসকালে তড়িঘড়ি সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানালেন রাজ্যপাল? কী এমন তাড়া ছিল তাঁর?
আরও পড়ুন: সরকার বাঁচাতে ডবল অভিযান
এ দিন শিবসেনা ও কংগ্রেস-এনসিপি জোটের তরফে আইনজীবী যথাক্রমে কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি মূলত দু’টি বিষয়ে আদালতে সরব হন। সিব্বলের প্রশ্ন, ‘‘কী এমন জাতীয় বিপর্যয় ঘটেছিল, যাতে শনিবার ভোর ৫টা ৪৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিতে হয়েছিল? কেন সব কিছুই শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৫টা ৪৭ মিনিটের মধ্যেই ঘটল? রাজ্যপাল কি ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারতেন না?’’ সিব্বলের দাবি, বিজেপি যে ভাবে সরকার গঠন করেছে, তাতে গণতন্ত্রের সঙ্গে জালিয়াতি করা হয়েছে।
সিঙ্ঘভি একে ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ বলেও আখ্যা দেন। দুই আইনজীবী আদালতের কাছে আজকেই আস্থাভোটের দাবি করেন। তাঁদের আরও দাবি, নির্বাচন পরবর্তী জোটের পর তিন দলের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে।