নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের ফাইল চিত্র
দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য নিয়ে মামলা করা হয়েছে, এই কারণ দেখিয়ে কোনও রাজ্য সরকার হাই কোর্টের অনুমতি ছাড়া বিধায়ক-সাংসদদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করতে পারবে না। বুধবার সু্প্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে এ মাসের ১০ তারিখ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন এই বেঞ্চই নির্দেশ দিয়েছিল, বিধায়ক বা সাংসদদের বিরুদ্ধে যে সব অপরাধমূলক মামলা রয়েছে, হাই কোর্টের অনুমতি ছাড়া রাজ্য সরকার সেই সব মামলা তুলে নিতে পারবে না, শীর্ষ আদালতের পরবর্তী নির্দেশ ছাড়া বিশেষ আদালতে তাদের এজলাসও বদল করতে পারবে না।
আজ সেই অবস্থানে অনড় থেকে বেঞ্চ জানিয়ে দিল, ‘দুরভিসন্ধি’র কারণ দেখিয়েও মামলা তোলা যাবে না। মামলা তুলতে হলে হাই কোর্টের অনুমতি লাগবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘দুরভিসন্ধিমূলক মামলা তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে আমরা নই। কিন্তু আদালতকে তা খতিয়ে দেখতে হবে। হাই কোর্ট মামলা পরীক্ষা করে দেখে যদি সম্মতি দেয়, মামলা তুলে নেওয়া যাবে।’’ না হলে, ‘‘মামলা তুলতে চাইলেই তো সরকারেরা বিনা দ্বিধায় স্রেফ একটা শব্দ (দুরভিসন্ধি) যোগ করে দেবে,’’ মন্তব্য করেছে বেঞ্চ। সেই সঙ্গে নিজের নির্দেশ ব্যাখ্যা করে আদালত এও বলেছে, বিধায়ক-সাংসদদের বিরুদ্ধে জমে থাকা মামলার দ্রুত বিচারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, অন্যান্য মামলা টপকে গিয়ে হাই কোর্টকে আগে এই জাতীয় মামলা শুনতে হবে।
এ দিন বিধায়ক-সাংসদদের বিরুদ্ধে জমে থাকা মামলার দ্রুত বিচারের আর্জি সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলছিল। বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায় মামলাটি করেছেন। আইনজীবী স্নেহা কলিতার মাধ্যমে আদালত-বন্ধু আইনজীবী বিজয় হংসারিয়া তাঁর রিপোর্ট এর মধ্যে জমা দিয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার কোনও কারণ না দেখিয়েই ২০১৩-র মুজফ্ফরনগর দাঙ্গা সংক্রান্ত ৭৭টি মামলা তুলে নিয়েছে।
এর পূর্ববর্তী শুনানিতেও হংসারিয়া মুজফ্ফরনগর প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তাঁর রিপোর্টেও জানানো হয়েছে, মুজফ্ফরনগরের ঘটনায় মেরঠের পাঁচটি জেলায় মোট ৫১০টি মামলা রুজু হয়েছিল। এর মধ্যে ১৭৫টিতে চার্জশিট জমা পড়েছে। ১৬৫টিতে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে। ১৭০টি মামলা মুছে ফেলা হয়েছে। এবং এ সবের পরে ৭৭টি মামলা রাজ্য সরকার তুলে নিয়েছে। কোনও কারণ দর্শানো হয়নি। সরকার শুধু বলেছে, সব দিক খতিয়ে দেখে মামলা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
হংসারিয়ার মতে, এই তুলে নেওয়া মামলাগুলি হাই কোর্ট চাইলে পুনরায় খতিয়ে দেখতে পারে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় সেই সুযোগ রয়েছে। এই তুলে নেওয়া মামলাগুলির একাংশে অন্তত তিন জন বিজেপি বিধায়কের নাম অভিযুক্তের তালিকায় ছিল।
তবে কারণ না দেখিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার পথে শুধু উত্তরপ্রদেশ হাঁটেনি। কর্নাটক ৬২, তামিলনাড়ু ৪, তেলঙ্গানা ১৪ এবং কেরল ৩৬টি মামলা এই ভাবে তুলে নিয়েছে বলে হংসারিয়ার রিপোর্ট জানিয়েছে।