বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
কাঁথি পুরসভার দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট ‘রক্ষাকবচ’ দিয়েছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আত্মীয়দের। হাই কোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে রাজ্য সরকার। শুক্রবার সেই আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালত জানায়, হাই কোর্টের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করা হবে না। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বি আর গাভাই এবং প্রশান্ত কুমার মিশ্রের বেঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়ের করা ওই মামলার শুনানি ছিল।
আবেদন খারিজ হয়ে যেতেই রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে এক্স (পূর্বতন টুইট) করেন রাজ্যের শুভেন্দু। তিনি লেখেন, “আমার পরিবারের সদস্যদের, এমনকি, বাড়ির মহিলাদের হেনস্থা করার জন্য রাজ্যের আরও একটি প্রচেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট নস্যাৎ করে দিয়েছে। ২০১৭ সালের ঘটনায় ২০২২ সালে এসে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ এবং তার ভিত্তিতে আমার পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করা হয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্ট এই ধরনের অপকর্ম বন্ধ করেছে। যাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আজ সুপ্রিম কোর্টও সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছে।”
চলতি বছরের ৭ জুন ওই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অজয় কুমার মুখোপাধ্যায় রায় দিয়ে জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬০ ধারা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করতে হলে ৭২ ঘণ্টা আগে নোটিস দিতে হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের আগে শো-কজ নোটিস দিতে হবে। শো-কজ নোটিস ধরানোর ১০ দিন পর পর্যন্ত তাঁদের গ্রেফতার করা যাবে না। নোটিসের প্রেক্ষিতে পুলিশ সন্তুষ্ট না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে পারবে। হাই কোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার।
কাঁথি পুরসভা এলাকায় উন্নয়নমূলকে কাজ ঘিরে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কাঁথি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত শুরু করে কাঁথি থানা। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তমলুকের তৃণমূল সাংসদ তথা শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীর স্ত্রী সুতপা অধিকারী এবং শিশির অধিকারীর বড় ছেলে কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। ২০২২ সালের ১১ জুন সেই নোটিস পাঠানো হয়েছিল। এই নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা করেন শুভেন্দুর আত্মীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা এবং বিজেপির সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় পুলিশ এবং রাজ্য সরকার তাঁদের নিশানা করছে।
শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবি গোপাল শঙ্করনারায়ণন বলেন, “এই মামলার নির্দেশ দিতে হাই কোর্ট ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।” তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সুতপা অধিকারীকে তাঁর বাসভবনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি নোটিস জারি করেছিল এবং তাকে তার আয়কর রিটার্নের নথি জমা দিতে বলেছিল। অন্যদেরও একই রকম নোটিস জারি করা হয়েছিল। তাঁরা সামান্য এই নোটিসকে বাতিল করতে চেয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে সম্পর্কের দোহাই দিচ্ছেন।”
মামলাকারীদের আইনজীবি পি এস পটিয়ালা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর মক্কেলদের হেনস্থা করতে চাইছে।” তিনি আরও বলেন, “কলকাতা হাই কোর্টের এই নির্দেশ দেওয়ার কারণ রয়েছে। কাঁথি পুরসভায় বিরোধী দলনেতার ভাই চেয়ারম্যান পদে ছিলেন এবং তাঁর আত্মীয়েরা অন্যান্য পদে ছিলেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি এক জন ব্যক্তি এই অভিযোগ দায়ের করেন যে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে পুরসভার দ্বারা করা উন্নয়নমূলক কাজগুলি ‘প্রতারণামূলক’। পাঁচ বছর পর এফআইআর দায়ের করা হয়। অভিযোগ দায়ের করার মুহূর্তে, সেটিকে সরাসরি এফআইআরে রূপান্তরিত হয়।” সব শুনে বিচারপতি গাভাই বলেন, “সমস্ত তথ্য এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর নজর রেখে এই মামলায় আমরা হস্তক্ষেপ করতে চাই না।” এর পরেই রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।