ওমর আবদুল্লা।
পনেরো দিনে কিছু হেরফের হবে না, এই যুক্তিতে ওমর আবদুল্লাকে আটক করে রাখার বিরুদ্ধে তাঁর বোন সারার আর্জির দ্রুত শুনানিতে রাজি হল না সুপ্রিম কোর্ট। গত বছরের ৫ অগস্ট কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার পর থেকেই ফারুখ আবদুল্লা ও তাঁর পুত্র ওমরকে আটক করে রাখা হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁকে জন নিরাপত্তা আইনে (পিএসএ) বন্দি করা হয়। এর বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টের ‘হেবিয়াস কর্পাস’-এর মামলা করেছিলেন ফারুখ-কন্যা, ওমরের বোন সারা আবদুল্লা পাইলট।
‘হেবিয়াস কর্পাস’ মামলায় কাউকে বেআইনি ভাবে বন্দি করে রাখার অভিযোগ জানানো হলে, আদালতের তাঁকে এজলাসে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়ার কথা। আদালত এ ক্ষেত্রে খতিয়ে দেখে, ওই ব্যক্তিকে বেআইনি ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে কি না। কিন্তু আজ সুপ্রিম কোর্ট ওমরের বিষয়ে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করেছে। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে ২ মার্চ।
প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনকে তিন সপ্তাহ সময় দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সারার আইনজীবী কপিল সিব্বল প্রশাসনকে এত সময় দেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন। তিনি যুক্তি দেন, এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন জড়িত। বিচারপতি অরুণ মিশ্র তিন সপ্তাহের সময় কমিয়ে ১৫ দিন করে বলেন, ‘‘আপনি এত দিন অপেক্ষা করেছেন। এই মামলা দায়ের করতেই এক বছর সময় নিয়েছেন। আরও ১৫ দিনে বিশেষ কোনও তফাত হবে না।’’ সিব্বল পাল্টা যুক্তি দেন, ‘হেবিয়াস কর্পাস’-এর জন্য এক বছর সময় নেওয়া হয়নি। প্রথমে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমরকে আটক করার পিছনে কারণ দেখানো হয়েছিল, তিনি অশান্তি তৈরি করতে পারেন। কিন্তু গত ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁকে পিএসএ-তে আটক করা হয়েছে। এর সঙ্গে আগের সতর্কতামূলক আটকের কোনও সম্পর্ক নেই।
ওমর-কে পিএসএ-তে আটক করার পরে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন জানিয়েছিল, ওমর কাশ্মীরে একটু বেশিই জনপ্রিয়। জঙ্গিরা ভোট বয়কটের ডাক দেওয়া সত্ত্বেও তিনি অনেক ভোট পান। ছাড়া পেলে তিনি ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে মানুষকে জড়ো করতে পারেন। সিব্বল এই সব যুক্তির দিকে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ওমর গত ছয় মাসের বেশি বন্দি। তাঁকে আরও কিছু দিন বন্দি করে রাখার পিছনে কোনও যুক্তি নেই।
ওমরের বোন সারা রাজস্থানের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলটের স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এটা যেহেতু হেবিয়াস কর্পাসের মামলা, তাই বন্দিকে আদালতের সামনে নিয়ে আসতে হয়। আমাদের আশা, শীঘ্রই সুরাহা মিলবে। বিচার ব্যবস্থার উপরে সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে। আমি চাই কাশ্মীরিরাও বাকি ভারতীয় নাগরিকদের মতো অধিকার পান। আমরা সেই দিনেরই অপেক্ষা করছি। সেই জন্যই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
সারা আশাবাদী হলেও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এর আগে কাশ্মীরের সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামির জন্যও ‘হেবিয়াস কর্পাস’-এর মামলা করেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। কিন্তু আদালত তারিগামিকে সুপ্রিম কোর্টে হাজির করানোর বদলে ইয়েচুরিকে কাশ্মীরে গিয়ে তারিগামির খবর নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ইয়েচুরির অন্য কোথাও যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।