সুপ্রিম কোর্টে ‘এক পদ, এক পেনশন’ মামলা। —ফাইল চিত্র।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনদের ‘এক পদ, এক পেনশন’ ব্যবস্থার অসঙ্গতিগুলি এখনও ঠিকঠাক করে উঠতে পারেনি কেন্দ্র। মঙ্গলবার সেই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল কেন্দ্রীয় সরকারকে। আর কত দিন এ ভাবে চলতে থাকবে? প্রশ্ন আদালতের। সিদ্ধান্তগ্রহণে দেরি হওয়ার কারণে কেন্দ্রকে ২ লাখ টাকা জরিমানাও করেছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ও বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চের নির্দেশ, সেনা কল্যাণ তহবিলে ওই জরিমানার অঙ্ক জমা করতে হবে।
‘এক পদ, এক পেনশন’ ব্যবস্থায় যেখানে যেখানে অসঙ্গতি রয়েছে, তা ঠিক করার জন্য কেন্দ্রকে শেষ সুযোগ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আগামী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে গোটা ব্যবস্থা ঠিকঠাক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনদের ১০ শতাংশ বর্ধিত হারে পেনশন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে, এমন কথাও জানিয়ে রেখেছে শীর্ষ আদালত। আগামী ২৫ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
মঙ্গলবার কেন্দ্রের তরফে আদালতে সওয়াল করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাট্টি। তাঁর যুক্তি, সশস্ত্র বাহিনী সংক্রান্ত ট্রাইবুনালের কোচি বেঞ্চ ‘এক পদ, এক পেনশন’ ব্যবস্থায় ছ’টি ক্ষেত্রে অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছিল। যেগুলি সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। তবে সরকার এ বিষয়ে এখনও পরবর্তী পদক্ষেপ করেনি। সে কথা শুনেই শীর্ষ আদালতের ধমক, “আর কত দিন এ ভাবে চলতে থাকবে? হয় আপনারা ১০ শতাংশ বর্ধিত হারে পেনশন দিন, না হলে আদালত স্থির করে দিক। আমরা চেয়েছিলাম, আপনারা একটি সিদ্ধান্তে আসুন, কিন্তু তা হয়নি। ২০২১ সালে এটি আটকে রয়েছে, কিন্তু এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হল না।”
তবে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য, সরকার হঠাৎ করে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে না। যে ছ’টি অসঙ্গতির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলিকে সার্বিক ভাবে খতিয়ে দেখতে হবে এবং এগুলির ফলে বাকিদের উপর কোনও প্রভাব পড়বে কি না, সেটিও দেখা দরকার। তিনি বলেন, “আদালতের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। দয়া করে আমাদের আরও একটি সুযোগ দিন। আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব।”
যদিও কেন্দ্রকে আর সুযোগ দিতে প্রথমে রাজি ছিল না সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি খন্না ভর্ৎসনার সুরে বলেন, “এ সব কী হচ্ছে? যদি সরকার কোনও সিদ্ধান্তই না নেয়, তা হলে আমাদের করার কিছু নেই। হয় আপনারা ১০ শতাংশ বর্ধিত হারে পেনশন দেওয়া শুরু করুন, না হলে আদালত সিদ্ধান্ত নিক। আপনারা বেছে নিন।”
পরে অবশ্য ২ লাখ টাকা জরিমানা করে কেন্দ্রকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার শেষ সুযোগ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আদালতের নির্দেশ, চার সপ্তাহের মধ্যে জরিমানার অঙ্ক জমা দিতে হবে সেনা কল্যাণ তহবিলে। একই সঙ্গে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে ‘এক পদ, এক পেনশন’-এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রসঙ্গত, ‘এক পদ এক পেনশন’ ব্যবস্থা ঘিরে প্রথম বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ২০১৫ সালে। এই ব্যবস্থায়, একই সময়ের জন্য একই পদে কাজ করে যিনি আগে অবসর নিয়েছেন এবং যিনি এখন অবসর নিচ্ছেন, উভয়েরই পেনশনের অঙ্ক সমান হবে। ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর নিম্ন আদালত (সশস্ত্র বাহিনী সংক্রান্ত ট্রাইবুনাল) সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল ছ’টি অসঙ্গতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি। শীর্ষ আদালত এ-ও জানিয়েছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে সময় দেওয়ার জন্য এই মামলা বারংবার পিছিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ বার কড়া সিদ্ধান্ত শীর্ষ আদালতের।