বিহারে জেডি (ইউ)-আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার শুরু করে জাতগণনা। ছবি: সংগৃহীত।
বিহারে জাতভিত্তিক গণনা চালু করার আর্জি খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। জাতভিত্তিক গণনা মুলতুবি রাখার জন্য পটনা হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে বিহার সরকারের তরফে যে আবেদন জানানো হয়েছিল, শীর্ষ আদালত তা খারিজ করেছে। সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার তার পর্যবেক্ষণে প্রশ্ন তুলেছে, ‘‘কারা তথ্য সংগ্রহ করছে? সমীক্ষা হোক বা সুমারি, আমরা আগে প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করে দেখব।’’
প্রসঙ্গত, গত ৪ মে পটনা হাই কোর্ট বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সরকারের জাতভিত্তিক গণনা কর্মসূচি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। স্থগিতাদেশ জারি করে হাই কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছিল, ‘‘এমন জাতভিত্তিক গণনার অধিকার শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে।’’ পটনা হাই কোর্টের ওই রায়ের পর নীতীশ বলেছিলেন, ‘‘জাতভিত্তিক গণনার কাজ হলে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলির সুবিধা হত।’’ সেই সঙ্গে পটনা হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।
গত নভেম্বরে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট সিলমোহর দেওয়ার পরেই দেশ জুড়ে জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। বিহারে দ্রুত জেডি (ইউ)-আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার শুরু করে জাতগণনা। বস্তুত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আগেই গত ৬ জুন নীতীশ সরকার জাতগণনার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। কিন্তু পটনা হাই কোর্টের রায়ে তা থমকে গিয়েছে।
এর পর বিহার সরকারের সেই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল পটনা হাই কোর্টে। আবেদনকারী পক্ষের দাবি ছিল, নীতীশ সরকারের এই পদক্ষেপ ‘বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক’। এই পদক্ষেপ সংবিধানের মৌলিক অধিকার এবং ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের (সমতা ও সাম্যের অধিকার) পরিপন্থী বলে অভিযোগ আবেদনকারীদের। বিহারে জাতগণনার প্রথম পর্ব ৭ থেকে ২১ জানুয়ারি হয়েছিল। ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্ব ১৫ মে পর্যন্ত চলার কথা ছিল৷ কিন্তু তার আগেই স্থগিতাদেশ দিয়েছিল পটনা হাই কোর্ট।
লোকসভা ভোটের আগে অনগ্রসর (ওবিসি) ভোটের লক্ষ্যে জেডি (ইউ) সভাপতি নীতীশ এবং তাঁর সহযোগী আরজেডির নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব জাতভিত্তিক গণনার দাবিতে আরও সুর চড়াবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন। তাঁদের মতে, জাতগণনা হলেই ওবিসিদের আসল সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে যাবে।ওবিসিদের জন্য এখন ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু ওবিসিদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বলে মনে করা হয়। জাতগণনাতেও তা উঠে এলে স্বাভাবিক ভাবেই ওবিসিদের জন্য আরও বেশি সংরক্ষণের দাবি উঠবে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরিতে অসংরক্ষিত (জেনারেল) আসন আরও কমার সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে মেধার উপর আঘাত আসবে বলে অভিযোগ জাতগণনার বিরোধীদের।