সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যে বিতর্কের ঝড়। —ফাইল চিত্র।
নাবালিকাকে ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত সরকারি কর্মী। তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ, নির্যাতিতাকে বিয়ে করার। অভিযুক্ত যদিও বিবাহিত। কিন্তু নির্যাতিতাকে বিয়ে করতে চাইলে আদালতের তরফে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিলেন প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে। এমনকি তাঁর চাকরি যাতে না যায়, তা দেখবেন বলেও জানালেন। প্রধান বিচারপতির এমন মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় নেটমাধ্যম। নেটাগরিকদের প্রশ্ন, ধর্ষণের পর বিয়ে করলেই কি অপরাধ মাফ হয়ে যায়? দেশের সর্বোচ্চ আদালত কি তাহলে ধর্ষণকে আর গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখছে না? নাকি ধর্ষণকারীর সঙ্গে সংসার করিয়ে মেয়েটিকেই সাজা দেওয়া হচ্ছে?
অভিযুক্ত মোহিত সুভাষ চহ্বাণ মহারাষ্ট্র সরকারের বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী। এক স্কুল পড়ুয়াকে ধর্ষণের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। যৌন নির্যাতন থেকে শিশু সুরক্ষা (পকসো) আইনে মামলা চলছে। গ্রেফতারি থেকে সুরক্ষা পেতে শীর্ষ আদালতে দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। সোমবার সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বোবদে যে মন্তব্য করেন, তা নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে।
শুনানি চলাকালীন বিচারপতি বোবদে বলেন, ‘‘মেয়েটিকে ফুঁসলেছেন আপনি। ধর্ষণ করেছেন। বিয়ে করতে চাইলে, আমরা সাহায্য করতে পারি। তা না হলে চাকরি তো যাবেই। জেলেও যেতে হবে।’’ জবাবে অভিযুক্তের আইনজীবী জানান, নির্যাতিতা থানায় যাওয়ার পর মোহিতের মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় বিয়েতে রাজি হয়নি ওই কিশোরী। তার পর পুলিশের মধ্যস্থতায় একটি লিখিত নথি তৈরি হয়, যেখানে বলা হয়, মেয়েটির বয়স ১৮ পেরোলে অভিযুক্তের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে তার। তার পরেও মেয়েটি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করায় তাকে বিয়ে করতে রাজি হননি তাঁর মক্কেল।
এর পরই সরাসরি অভিযুক্তকে প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি, ‘‘আপনি কি মেয়েটিকে বিয়ে করবেন? আমরা জোর করছি না। ভেবেচিন্তে জানান। না হলে বলবেন আমরাই জোর করছি।’’ উত্তরে অভিযুক্ত বলেন, ‘‘প্রথমে বিয়ে করতেই চেয়েছিলাম আমি। ও রাজি হয়নি। এখন আর পারব না। অন্যত্র বিয়ে করে নিয়েছি আমি। তা ছাড়া মামলা চলাকালীন আর কী কী অভিযোগ আনা হবে জানি না। আমি সরকারি কর্মী। গ্রেফতার হলে আপনা আপনিই চাকরি চলে যাবে।’’
অভিযুক্তের জবাব শোনার পরেও বিচারপতি বোবদে বলেন, ‘‘সময় দিচ্ছি। ভাবনা চিন্তা করুন। আপাতত ৪ সপ্তাহের জন্য গ্রেফতারিতে স্থগিতাদেশ দিচ্ছি। তার পর জামিনের আর্জি জানাতে পারেন।’’ প্রধান বিচারপতির এমন মন্তব্য সামনে আসতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে নেটমাধ্যমে। এক নেটাগরিকের প্রশ্ন, ‘সরকারি কর্মচারি কাউকে ধর্ষণ করার পর বিয়েতে রাজি হলেই কি সব দোষ মাফ হয়ে যায়? প্রধান বিচারপতি কি সেই রাস্তাই খুলে দিচ্ছেন’? কেউ আবার লেখেন, ‘দেশের বিচার ব্যবস্থা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। দেশের বর্তমান বিচার ব্যবস্থা নিয়ে লজ্জার শেষ নেই’।
অন্য দিকে, সোমবারই আরও একটি ধর্ষণ মামলার শুনানি ওঠে শীর্ষ আদালতে। সেখানে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন এক মহিলা। অভিযুক্ত মামলা খারিজের আবেদন জানালে তার বিরোধিতা করছিলেন মহিলার আইনজীবী। তাঁর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বোবদে বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রী যখন এক ছাদের নীচে থাকেন, তখন স্বামী যতই নৃশংস হোন না কেন, তাঁদের মধ্যেকার শারীরিক সম্পর্ককে কি ধর্ষণ বলা উচিত’’? তাতেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। নেটাগরিকদের প্রশ্ন, ‘তাহলে কি দাম্পত্যকালীন ধর্ষণকে ছাড়পত্র দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট’?
তবে এই প্রথম নয়, ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত পঞ্জাবের এক যুবককে সম্প্রতি শীর্ষ আদালত এই শর্তে রেহাই দেয় যে, ছ’মাসের মধ্যে নির্যাতিতাকে বিয়ে করতে হবে তাঁকে। প্রতিশ্রুতি না রাখলে তাঁকে জেলে পোরা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় আদালত।