যানহীন: হরতালের শ্রীনগর। লালচকে সোমবার। ছবি: পিটিআই।
সংবিধানের ৩৫এ ধারার বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানি পিছিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ফলে কাশ্মীরে টানটান উত্তেজনার মধ্যে কিছুটা স্বস্তি পেল রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। অগস্টের শেষ সপ্তাহে ফের ওই মামলার শুনানি হবে।
সংবিধানের ৩৫এ ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরের ‘স্থায়ী বাসিন্দা’রা বিশেষ অধিকার ভোগ করেন। এই ধারার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন-সহ বেশ কয়েক জন আবেদনকারী। কাশ্মীরের কেবল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নয়, মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলিও এই ধারা খারিজের বিরোধী। ফলে শুনানি শুরুর পর থেকেই দফায় দফায় হরতালে স্তব্ধ হয়েছে কাশ্মীর। আবার জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের মূলস্রোতে আরও বেশি শামিল করার যুক্তিতে ধারাটি খারিজের পক্ষে রয়েছে বিজেপি, সঙ্ঘ পরিবার-সহ কয়েকটি শিবির।
৩৫এ ধারা নিয়ে শুনানি চলছে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এখন ছুটিতে রয়েছেন। আজ প্রধান বিচারপতি জানান, তিন সদস্যের বেঞ্চ এই মামলার বিচার করছে। তৃতীয় সদস্য অনুপস্থিত। তাই মামলা অন্য দিন শোনা হবে। জম্মু-কাশ্মীর সরকার ও কেন্দ্রের তরফে শীর্ষ আদালতের কাছে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। আবেদনকারীর আইনজীবীরা জানান, এই মামলার শুনানির আগে এক বার করে জম্মু-কাশ্মীরে হরতাল হচ্ছে। তাই শুনানি পিছনো উচিত নয়। জবাবে বিচারপতিরা জানান, ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজ্যের মানুষ ওই ধারায় উল্লিখিত অধিকার ভোগ করছেন। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টে ওই ধারার বিরুদ্ধে আবেদনগুলি পেশ হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিচার প্রক্রিয়া বেশ কিছুটা এগিয়েছে।
৩৫এ ধারা
• ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সংবিধানের ধারাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
• এই ধারায় জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে।
• এই ধারা অনুযায়ী রাজ্য বিধানসভা স্থির করতে পারে রাজ্যের ‘স্থায়ী বাসিন্দা’ কারা এবং তাঁদের বিশেষ অধিকার কী হবে।
• কেবল স্থায়ী বাসিন্দারাই ওই রাজ্যে সম্পত্তির মালিকানা, সরকারি চাকরি বা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার
অধিকার পান।
• রাজ্যের বাসিন্দা কোনও মহিলা রাজ্যের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। তাঁর উত্তরাধিকারীদেরও সম্পত্তির উপরে অধিকার থাকে না।
কাশ্মীরে হরতালের জেরে গত কাল ও আজ জম্মু থেকে অমরনাথ যাত্রা বন্ধ রাখা হয়েছিল। বালতাল ও পহেলগামে পৌঁছে যাওয়া যাত্রীরা অবশ্য অমরনাথ গুহার দিকে এগিয়েছেন। উপত্যকার সব ধারার সংগঠনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন থাকায় দু’দিন পুরোপুরি স্তব্ধ ছিল কাশ্মীর। এ দিন বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতৃত্ব এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অমরনাথ যাত্রার কথা মাথায় রেখেই শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই আইনের বদলের চেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।