মাছ-ভাত খাওয়ানো বাংলা শেখা মরাঠি

নিজে মরাঠি হয়েও সুনীল যত্ন করে বাংলা শিখলেন মাস্টারমশাই রেখে। ত্রিপুরার ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেসের নেতারা তখন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছিলেন। সুনীল তৃণমূল থেকে নেতা-কর্মী, যুবক-মহিলাদের আনতে লাগলেন বিজেপিতে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৫
Share:

সুনীল দেওধর।

ছক কষা শুরু হয়ে গিয়েছিল চার বছর আগে। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই অমিত শাহ হুঙ্কার দেন, বিজেপিকে তার দুর্বল এলাকাগুলিতে ছড়িয়ে দিতে হবে। আরএসএসের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়, সুনীল দেওধর নামের এক প্রচারককে পাঠানো হবে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ছোট্ট রাজ্যটিতে।

Advertisement

নিজে মরাঠি হয়েও সুনীল যত্ন করে বাংলা শিখলেন মাস্টারমশাই রেখে। ত্রিপুরার ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেসের নেতারা তখন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছিলেন। সুনীল তৃণমূল থেকে নেতা-কর্মী, যুবক-মহিলাদের আনতে লাগলেন বিজেপিতে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব ছিলেন। কিন্তু আজকের জয়ের ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ সুনীলই।

এ রাজ্যে বাম শাসন সুদীর্ঘ। ১৯৮৮-তে রাজীব গাঁধীর প্রতিনিধি হিসেবে সুনীলের ভূমিকাই পালন করেছিলেন সন্তোষমোহন দেব। ১৯৭৭ থেকে ত্রিপুরায় টিকে থাকা বাম শাসনকে পাল্টে দিয়েছিলেন। বাঙালি বনাম উপজাতি হিংসা চলছিল তখন। উপদ্রুত এলাকা আইন প্রয়োগ করে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট হয় ত্রিপুরায়। তার পর পাঁচ বছর সুধীর মজুমদার, সমীর বর্মণের টালমাটাল সরকার। এক বছরের রাষ্ট্রপতি শাসন। ১৯৯৩ থেকে আবার সিপিএম। প্রথমে উপজাতি নেতা দশরথ দেব, তার পরে মানিক সরকার।

Advertisement

দায়িত্ব পেয়েই সুনীল বুঝেছিলেন, দশরথের মাপের উপজাতি নেতা আর নেই ত্রিপুরার সিপিএমে। তিনি তখন সমস্ত উপজাতি সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলেন। তাঁদের উন্নয়নের কাজ শুরু করে আরএসএসের বনবাসী সংগঠনও। শাড়ি পরিহিতা ভারতমাতার বদলে উপজাতির পোশাকে ভারতমাতার কাটআউট তৈরি করে সুনীল উত্তরে ধর্মনগর-কৈলাশহর থেকে দক্ষিণের বিলোনিয়া পর্যন্ত প্রচার করেন। হিন্দি ও নিরামিষ, দু’টি ব্যাপারেই উদার মনোভাব নেন। নিজে নিরামিশাষী হলেও রাজ্যের সভাগুলিতে বিজেপি কর্মীদের মাছ-ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন সুনীল।

ত্রিপুরায় নাথ সম্প্রদায়ের মানুষ শতকরা প্রায় ২২ ভাগ। তাঁদের কাছে টানতে সুনীল ব্যবহার করেছেন যোগী আদিত্যনাথকে। বাঙালি ভোট ও নতুন প্রজন্মকে পাশে পেতে আরএসএসের সঙ্গে আরও একটি অভিনব কৌশল নিয়েছেন সুনীল। বেঙ্গালুরুতে ম্যানেজমেন্ট পড়তে যাওয়া ত্রিপুরার ছাত্রদের নিয়ে সভা করেছেন ওই শহরে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারও হাজির হন সেখানে।

এ ভাবেই ভোটের আগে ত্রিপুরার মানুষের মন জয়ের কাজটা চালাচ্ছিলেন অমিত শাহ। ও দিকে, আইটিবিপির প্রধান রঞ্জিৎ পচনন্দাকে পর্যবেক্ষক করে পাঠিয়ে ত্রিপুরা সিপিএমের বুথ দখলের কৌশল সম্পর্কে রিপোর্ট সংগ্রহ করেন মোদীরা। অফিসারদের কেন্দ্র কঠোর বার্তা দেয়, গণনার সময়ে যেন সন্ত্রাস না হয়। সব শেষে টাকা-পয়সা বিলোনোর কাজটা সারতে পাঠানো হয় উত্তর-পূর্বেরই ভূমিপুত্র হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে। এটা সুনীলকে দিয়ে হত না।

পরিপাটি নিখুঁত ছক। বাজিমাত তাতেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement