সুখেন্দুশেখর রায়। ফািল চিত্র।
যে সংসদীয় কমিটির সভাপতি বছরের পর বছর বৈঠকই ডাকেন না, সেই কমিটিতে থাকা ‘অর্থহীন’। এই যুক্তি দিয়েই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের পরামর্শদাতা কমিটির সদস্যপদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার মুখ্য আহ্বায়ক সুখেন্দুশেখর রায়। ওই কমিটির সভাপতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অভিযোগ, ২০১৯-এর পরে এত দিন কমিটির কোনও বৈঠক ডাকেননি তিনি। এই বছর কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার (অক্টোবর) ঠিক আগে অর্থ মন্ত্রকের পরামর্শদাতা এই কমিটির বৈঠক ডাকেন নির্মলা। কিন্তু তার আগেই মনস্থির করে ফেলেছিলেন তৃণমূলের এই নেতা। তিনি দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। ফলে এই বছরে কমিটির নতুন কার্যকালে সুখেন্দুশেখরের নাম আর দিচ্ছে না তৃণমূল কংগ্রেস।
গত দশ বছর এই কমিটির সদস্য থাকা সুখেন্দুশেখর বলছেন, “দেশের এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে কোনও কথাই আমাদের সংসদে বলতে দেওয়া হয় না। নামেই পরামর্শদাতা কমিটি রয়েছে, কিন্তু গত দু’বছর কোনও বৈঠকই ডাকেননি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এক দিকে সংস্কারের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেচে দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে কয়েক জন শিল্পপতিকে আরও ধনবান করা হচ্ছে। সরকার দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই কথাগুলি বলার জায়গা নেই। ফলে এই কমিটিতে থেকে নিজের সময় নষ্ট করা অর্থহীন।”
কালই বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ জন লোকসভা এবং ১৬ জন রাজ্যসভা সদস্যের মধ্যে একমাত্র সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই একটি স্থায়ী কমিটির (কেন্দ্রীয় খাদ্য, গণবণ্টন
এবং ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রক) চেয়ারম্যানের পদ দেওয়া হয়েছে। বিরোধী নেতাদের সরিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলির চেয়ারম্যানের পদ নিজেদের দখলে নিচ্ছে বিজেপি— এই অভিযোগে বহু দিন থেকেই সরব কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো দলগুলি। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা বা রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিটিগুলির ভূমিকা রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী সরকার বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করার পাশাপাশি সংসদের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতেও আধিপত্য বজায় রাখতে চাইছে।
তবে এ বারও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে চেয়ারম্যানের পদ দেওয়া হয়নি। সূত্রের খবর, শিশির অধিকারীকে (যিনি তৃণমূলের সাংসদ থাকা সত্ত্বেও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন) এই পদটি দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর সাংসদ পদ বাতিল করার জন্য স্পিকারের কাছে তৃণমূলের তরফে চিঠি দেওয়া রয়েছে। সেই কারণে শিশিরবাবুকে কোনও কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়নি।