Education

IAM: হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নজির গড়েছে আইএএম কলকাতা

বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আইএএম, হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা জগতে শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম পথিকৃৎ হয়ে উঠেছে।

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২২ ১৪:০৭
Share:

আইএএম কলকাতার শিক্ষার্থীরা

দুনিয়া বদলাচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে তৈরি হচ্ছে প্রতিযোগিতার আসর। এহেন বিশ্বে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রয়োজন নির্দিষ্ট দক্ষতার। যা তাকে বাস্তব জগতে চাকরির বাজারে অতিরিক্ত সুবিধা দেবে। প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে স্নাতক পাশ করার পরে এক জন শিক্ষার্থী তার পড়াশুনার ভিত্তিতে চাকরিক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে। তবে যাই হোক না কেন, হসপিটালিটি ক্ষেত্রের মতো প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে সফল পেশাদার হিসেবে টিকে থাকার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বিস্তৃত অভিজ্ঞতা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।

বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আইএএম, হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা জগতে শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম পথিকৃৎ হয়ে উঠেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি যা দৃঢ়ভাবে 'ব্লেন্ডেড লার্নিং' পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাস্তব জগতের জন্য উপযুক্ত করে তুলছে। পরিসংখ্যান বলছে, আইএএম শিক্ষার্থীদের যে ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে, তাতে পাঠ্যক্রম শেষে শুধুমাত্র কর্মসংস্থানই নয়, তার সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শিক্ষার্থীদের টিকে থাকতেও সাহায্য করে। সেই শুরুর সময় থেকেই, আইএএম শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের দিকে মনোযোগ দিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাস যে তাদের এই শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে ভবিষ্যতে নৈতিকভাবে সঠিক এবং দক্ষ পেশাদার হিসেবে গড়ে উঠবে। বলা বাহুল্য, আইএএম প্রথম ভারতীয় প্রতিষ্ঠান, যারা আন্তর্জাতিক স্তরের ডিগ্রি প্রোগ্রাম প্রদানের অনুমোদন পেয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠানটির যে পাঠ্যক্রম রয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালগুলি দ্বারা স্বীকৃত। যে পাঠ্যক্রমের মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের বিশ্বব্যাপী হসপিটালিটি ক্ষেত্রের জন্য উপযোগী করে তোলা। আইএএম-এর প্রতিষ্ঠাতা, ডিরেক্টর মৈত্রেয়ী চৌধুরি জানাচ্ছেন, “প্রথাগত তাত্ত্বিক শিক্ষার পরিবর্তে বাস্তব ক্ষেত্রে শিক্ষার সর্বোত্তম প্রয়োগ এবং বিশ্লেষণ ভিত্তিক শিক্ষাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্য নিয়েই পথ চলছে আইএএম। এখানকার ম্যানেজমেন্ট শিক্ষার পাঠ্যক্রম কখনই একই রকম রাখা হয় না। বরং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী, শিল্পের পরিবর্তনশীল গতি প্রকৃতির উপরে নির্ভর করে নতুন নতুন বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।”

আইএএম-এ পাঠ্যক্রমের এই ভিন্নধর্মীতাই অন্য প্রতিষ্ঠানগুলির থেকে এই প্রতিষ্ঠানটিকে আলাদা করে দিয়েছে। শুধুমাত্র পাঠ্যক্রমই নয়, এখানকার দক্ষ অনুষদদের প্রতিটি সেশন, শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ও বাস্তব জগতে শিক্ষার ব্যবহারিক পদ্ধতি আরও ভাল ভাবে শিখতে সাহায্য করে। ফলে শিক্ষার্থীরা গতে বাঁধা শিক্ষাপদ্ধতিকে অন্ধ অনুসরণ করার পরিবর্তে বিশ্লেষণাত্মক ও কৌশলগত চিন্তা করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি, এখানে নিয়মিত পড়াতে আসেন ইন্ডাস্ট্রির দিকপাল ব্যক্তিত্বরা। যাঁদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে কাজ শিখতে পারে।

এই প্রতিষ্ঠানটিতে ডুয়েল কোর্সের সুবিধা রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্ট লন্ডন, ইউকে থেকে ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে বিএসসি (অনার্স) ডিগ্রির সঙ্গে এনএসডিসি সাপোর্টেড হসপিটালিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অ্যাডভান্সড প্রোগ্রাম রয়েছে এখানে। এই প্রসঙ্গে মৈত্রেয়ী চৌধুরী বলেন, “ইউকে-র, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্ট লন্ডন, সঙ্গে আমাদের এই অ্যাসোসিয়েশন, এখানকার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইনস্টিটিউটের জন্যও প্রচুর সুবিধা করে দিয়েছে৷ শিক্ষার্থীরা ৩ বছরের কোর্সে তৃতীয় বর্ষে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্ট লন্ডন, ইউ.কে গিয়ে পড়ার সুযোগ পায়। পাশাপাশি সেখানকার সরকার দ্বারা পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা পুনঃপ্রবর্তনের ফলে সফলভাবে কোর্স শেষের পরে আমাদের শিক্ষার্থীর কাছে ইউকে-তে একটি অসাধারণ কর্মসংস্থানের সুযোগ খুলে গিয়েছে।”

এই ডুয়েল ডিগ্রি প্রোগ্রামের পাশাপাশি, আইএএম বেকারি, রান্নার দক্ষতা, বার এবং ব্রেভারেজ ম্যানেজমেন্ট সার্টিফিকেট কোর্স অফার করে। তা ছাড়াও আইএএম "ডিপ্লোমা ইন হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট" এবং "ডিপ্লোমা ইন কুলিনারি সার্ভিস" (সেন্টার ফর কোলাবোরেটিভ প্রোগ্রাম, ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ, ম্যাকাউট) অফার করে।

প্রথম থেকেই এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল গোড়া থেকে শিক্ষার্থীদের সার্বিকভাবে দক্ষ করে তোলা। সেই কারণেই এই প্রতিষ্ঠানটি হসপিটালিটি ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রশিক্ষণের প্রচারের জন্য স্মার্ট এডুসোলের মাধ্যমে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্পোরেশনের (এনএসডিসি) সঙ্গে জোট বেঁধেছে। ইন্ডাস্ট্রির একটি বিস্তারিত রূপ সম্পর্কে বর্ণনা পেতে শিক্ষার্থীদের ইগনু (IGNOU) থেকে পর্যটন শিক্ষায় ডিগ্রি নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয় এবং প্রয়োজনীয় সুবিধাও প্রদান করা হয়।

আইএএম-এ পড়াশুনা করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভারত জুড়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত একটি অনলাইন ভর্তি পরীক্ষার (কমন হসপিটালিটি অ্যাপটিটিউড টেস্ট) মুখোমুখি হতে হয়। এর পরে গ্রুপ ডিসকাশন এবং ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে মৈত্রেয়ী চৌধুরি জানাচ্ছেন, “যেহেতু আমাদের শিক্ষার্থীরা হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে, সেহেতু শিক্ষার্থীদের নির্বাচন পদ্ধতিতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়। আইএএম-এ পাঠরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কঠোর প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন তারা অতুলনীয় ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারে। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তজার্তিক সংস্থা যেমন ওবেরয় গ্রুপ অব হোটেল, তাজ গ্রুপ অব হোটেল, হায়াত গ্রুপ অব হোটেল, হিলটন, এডিনবার্গ, ফোর সিজন হোটেল, লন্ডন, শেরাটন হোটেল, রেডিসন হোটেল সহ আরও অনেকগুলি সংস্থা আইএএম-এর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

আইএএম সর্বদা শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যকে স্বীকার করা হয়, এবং স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি, সেই বোঝাপড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের শিক্ষাক্রম ও শেখার কৌশলগুলি নকশা করা হয়। এখানকার ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রোগ্রামগুলি শিক্ষাক্ষেত্র, ইভেন্ট থেকে ভবিষ্যত কর্মসংস্থানে শিক্ষার্থীদের সমান ও সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে।

দেশের প্রথম সারির হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি হল আইএএম, কলকাতা। এই প্রতিষ্ঠানটি এআইসিটিই দ্বারা অনুমোদিত এবং সুদক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করার জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এই প্রসঙ্গে মৈত্রেয়ী চৌধুরি জানাচ্ছেন, “আমরা আধুনিক জগতের সেই সব সুবিধাগুলি আমাদের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত করেছি যা শিক্ষাপদ্ধতিকে আরও উন্নত করে তুলতে পারে।” আইএএম-এর ক্যাম্পাসটি প্রশিক্ষণ রেস্তরাঁ, ফ্রন্ট অফিস, গেস্ট রুম, রান্নাঘর, বেকারি, লাইব্রেরি দ্বারা সুসজ্জিত। প্রতিষ্ঠানের ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য আন্তর্জাতিক খেতাব। মৈত্রেয়ী চৌধুরি আরও যোগ করেন, “এই প্রতিষ্ঠানে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাম্পাসের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব বাণিজ্যিক হোটেল রয়েছে। কম্পিউটার কেন্দ্রগুলিতে এখানকার শিক্ষার্থীদের 'ফিডেলিও' পিএমএস সফটওয়্যারের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা বিশ্বব্যাপী সমস্ত বড় হোটেলগুলিতে ব্যবহৃত হয়।" পাশাপাশি, এখানে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের মাস্টার ক্লাস করানোর জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় যাতে তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের জ্ঞানের সম্পদ ভাগ করে নিতে পারেন।”

এই প্রতিষ্ঠানে বরাবরই হাতে-কলমে অভিজ্ঞতার উপরে জোর দেওয়া হয়। সেই কারণেই বছরভর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হসপিটালিটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে উৎসাহিত করা হয়। এর মধ্যে একটি হল ফুড ফেস্টিভ্যাল। যেখানে শিক্ষার্থীরা ঘন্টার পর ঘন্টা গবেষণা ও অনুশীলনের পর তাদের রন্ধনসম্পর্কীয় দক্ষতা প্রদর্শিত করতে পারেন। কর্মক্ষম দক্ষতার পাশাপাশি ছাত্ররা ইভেন্টগুলির প্রচার, বিপণন পরিচালনাও করে যা আদতে তাদের পরিচালনাকার্যে দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই খাদ্য উৎসবগুলি কলকাতা ও গুয়াহাটির মতো জায়গায় অন্যতম প্রধান ভিড় আকর্ষণ করে। ফুড ফেস্টিভ্যাল ছাড়াও, শিক্ষার্থীদের মধ্যে দক্ষতা, সংগঠিতকরণ, দলগত মনোভাব উন্নীত করার জন্য আরও অনেকগুলি ইভেন্ট ডিজাইন করা হয়।

সম্প্রতি আইএএম-আইএইচএম ‘ফিউচার শেফ’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রন্ধনসম্পর্কীয় অনুষ্ঠান শুরু করেছে। এটি তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম যা তাদের রন্ধনসম্পর্কীয় প্রতিভা প্রদর্শন করার সময় তাদের প্রকৃত পেশা চিহ্নিত করার চেষ্টা করে। এই প্রসঙ্গে সেলিব্রিটি হসপিটালিটি এডুকেশন পার্সোনালিটি ইমেরিটাস প্রফেসর, ওয়েস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটি এবং রন্ধন বিজ্ঞানের সেলিব্রেটেড লেখক প্রফেসর ডেভিড ফসকেট জানিয়েছেন, “এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভবত এই প্রথমবার সমস্ত রন্ধন সম্পর্কীয় শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান একে অপরের থেকে শেখার ও সর্বোপরি নেটওয়ার্ক তৈরির সুযোগ বাড়াবে।”

বিশদে জানতে ক্লিক করুন https://iamhotelschool.ac.in/

এই প্রতিবেদনটি আইএএম-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন