Subramanian Swamy

রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সঙ্গীত এ বার বদলাতে চান স্বামী

বাংলার বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে গত দু’বছরে নানা সময় রবীন্দ্রনাথের নানা কবিতা আবৃত্তি করেছেন মোদী। এই অবস্থায় সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর টুইট নতুন বিতর্ক উস্কে দিল। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:১৩
Share:

সুব্রহ্মণ্যম স্বামী

বাংলার বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সঙ্গী নেতা-মন্ত্রীরা গত দু’বছরে নানা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বারবার টেনে এনেছেন। কিন্তু তাতে কী! এ বারে সেই রবীন্দ্রনাথের লেখা দেশের জাতীয় সঙ্গীতেই বদল চেয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দ্রুত সাড়া পেয়ে রীতিমতো উৎফুল্ল বিজেপির সাংসদ তথা অন্যতম নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে এ কথা লিখেওছেন তিনি। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

Advertisement

এমনিতে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন লেখা নিয়ে সঙ্ঘের বিভিন্ন মহলে নানা সময়ে আপত্তির কথা শোনা গিয়েছে। এমনকি মোদী ক্ষমতায় আসার পরে সঙ্ঘের শিক্ষা সেলের নেতা দীননাথ বাত্রা এনসিইআরটি-র পাঠ্যক্রম থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দেওয়ার সুপারিশও করেছেন। মোদী অবশ্য বাংলার বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে গত দু’বছরে নানা সময় রবীন্দ্রনাথের নানা কবিতা আবৃত্তি করেছেন। তাঁর দলের অন্য নেতারাও ইদানীং বাংলায় এলে রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করতে ছাড়েন না। এই অবস্থায় সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর টুইট নতুন বিতর্ক উস্কে দিল।

দেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘জন গণ মন’ নিয়ে সুব্রহ্মণ্যমের আপত্তি কেন? প্রবীণ এই বিজেপি সাংসদের দাবি, শুধু তাঁর নয়, ‘দেশের যুব সমাজের বড় অংশের মনের কথা’ বলছেন তিনি। তাঁর আপত্তির অন্যতম শব্দটি হল জাতীয় সঙ্গীতে ‘সিন্ধু’ শব্দটির ব্যবহার। স্বামীর মতে, বর্তমান জাতীয় সঙ্গীতের কিছু কিছু শব্দ (সিন্ধু) অনাবশ্যক ধন্দ তৈরি করে। বিশেষ করে স্বাধীনতা-পরবর্তী পরিপ্রেক্ষিতে। রবীন্দ্রনাথের ‘জন গণ মন’-র শব্দ বদলে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আইএনএ)-র গাওয়া ‘জন গণ মন’র আদলে লেখা অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় সঙ্গীত ‘কাওয়ামি তারানা’র প্রথম পংক্তি ‘শুভ সুখ চ্যান’ গানটি ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। ইতিহাস বলছে, ১৯৪৩-এ সুভাষ বসুর নির্দেশে আইএনএ-র দুই সদস্য মুমতাজ হোসেন এবং কর্নেল আবিদ হাসান সাফরানি গানটি লিখেছিলেন। সুর দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন রাম সিংহ ঠাকুর। সুরের প্রভেদ বিশেষ অবশ্য ছিল না।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথের ‘জন গণ মন’-র প্রথম পংক্তিটি জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয় এবং তাতে ৫২ সেকেন্ড সময় লাগে। পক্ষান্তরে আইএনএ-র ‘কাওয়ামি তারানা’র প্রথম পংক্তিটি গাইতে সময় লাগে ৫৫ সেকেন্ড। জাতীয় সঙ্গীতের শব্দ বদল প্রসঙ্গে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেছেন স্বামী। তা হল, ১৯৪৯ সালে রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন, জাতীয় সঙ্গীতের শব্দ পরিবর্তন বা সংশোধন করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে কারা রাজ্যের এই তিন আইপিএস অফিসার

আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবকে চিঠি লিখে কল্যাণের আক্রমণ শাহকে

কিন্তু তাতেও স্বামীর সমস্যা মিটছে কই? যে ‘সিন্ধু’ শব্দটি নিয়ে স্বামীর আপত্তি, আইএনএ-র গাওয়া গানে তো তার উল্লেখ রয়েছে। তা ছাড়া, ‘সিন্ধু’ শব্দটি বাদ দিলে আরএসএসের অখণ্ড ভারতের তত্ত্বই যে প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। বিজেপি সাংসদ হিসেবে স্বামী কি তা হলে সঙ্ঘের তত্ত্ব এবং স্বপ্নকেই আঘাত করলেন, সে প্রশ্নও উঠছে। স্বামী অবশ্য এত কথায় ঢুকতে চাননি। তাঁর আশা, আগামী বছর ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করবে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

কিন্তু আগামী বছরেই যে বাংলার ভোট! তার আগে রবীন্দ্রনাথের লেখা দেশের জাতীয় সঙ্গীত বদলের ঝুঁকি নেবে বাংলায় জিততে মরিয়া বিজেপি? সে প্রশ্ন তাই থাকছেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement