বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
তিরের নিশানা ছিলেন পি চিদম্বরম। তা ঘুরে গেল কেন্দ্রীয় অর্থসচিব হাসমুখ আঢ়িয়ার দিকে।
সরকারের অন্দরেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করলেন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজন বলে পরিচিত অর্থসচিব হাসমুখ আঢ়িয়া-সহ অর্থ মন্ত্রকের আমলাদের একাংশ এবং বেশ কিছু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দিকে আঙুল তুললেন তিনি। স্বামীর দাবি, অর্থ মন্ত্রকেরই অধীন ইডি-র এক তদন্তকারী অফিসারকে হয়রান করছেন গুজরাত ক্যাডারের আইএএস হাসমুখ।
কার্যত এই প্রথম, এতটা হাটখোলা হয়ে গেল মোদী সরকারের অন্দরের দ্বন্দ্ব। স্পষ্ট হয়ে গেল সরকারি তদন্তকারী সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও।
আরও পড়ুন: রাজ্যসভার পদে তৃণমূল লড়লে পাশে থাকবে কংগ্রেস
নেপথ্যে, সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়। আদালত আজ জানিয়েছে, টু-জি এবং এয়ারসেল-ম্যাক্সিস কেলেঙ্কারিতে ইডি-র তদন্তকারী অফিসার রাজেশ্বর সিংহের বিরুদ্ধে যথেষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তার তদন্ত দরকার। রাজেশ্বরের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন রজনীশ
কপূর নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু স্বামীর দাবি, সবই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কারসাজি। কারণ ওই কেলেঙ্কারির মূল নায়ক তিনি ও তাঁর পুত্র কার্তি। চিদম্বরমকে অর্থ মন্ত্রকের একাংশও সাহায্য করছে বলে স্বামীর অভিযোগ।
অথচ আজ সুপ্রিম কোর্টে সরকারের তরফেই রাজেশ্বরের সম্পর্কে মুখবন্ধ খামে দু’পাতার একটি নোট জমা পড়ে। খাম খুলে বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি এস কে কল নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা করে জানান, সরকারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা জড়িত। দুর্নীতির অভিযোগের থেকেও তা গুরুতর। সরকার রাজেশ্বরের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারে। এর পরেই মুখ খোলেন স্বামী। বলেন, ‘‘আমি ইডি-র তদন্তকারীর পক্ষে দাঁড়াচ্ছি। অথচ অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (মুখবন্ধ খামটি তিনিই দেন) আমার আর সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছেন। তাই বলাই যায়, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।’’
রাজেশ্বর সম্প্রতি অর্থসচিবকে এক চিঠিতে লেখেন, ‘‘চিদম্বরম আমার জীবন নরক করে দিয়েছেন। আর আপনি দুর্নীতিগ্রস্তদের পক্ষ নিচ্ছেন! আপনি কি মনে করেন, আমার পক্ষে আদৌ বিচারপতিদের প্রভাবিত করা সম্ভব?’’ অর্থসচিব তাঁর পদোন্নতি আটকে রেখেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন রাজেশ্বর। আজ একই অভিযোগ করেছেন স্বামী। সেই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘নীরব মোদীর বিরুদ্ধে রাজস্ব-গোয়েন্দাদের তদন্তে বাধা দিয়েছেন অর্থসচিব। ওঁকে কাঠগড়ায় তোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’’ দীপাবলির সময়ে তিনি সোনার বিস্কুট উপহার পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন হাসমুখ। তা সরকারি তোষাখানায় পাঠিয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন। স্বামী তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন অর্থসচিব তদন্তের নির্দেশ দেননি! আজও তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এ সবের পিছনেও কি সোনার বিস্কুট!’’
কী ছিল ওই মুখবন্ধ খামে? বলেননি বিচারপতিরা। তবে স্বামীর দাবি, রাজেশ্বরের সঙ্গে শাহ মহম্মদ আলম ওরফে দানিশ শাহ নামে দুবাইয়ের এক ব্যক্তির কথোপকথন সম্পর্কে ‘র’-এর গোপন রিপোর্ট রয়েছে ওই খামে। দুবাইয়ে দানিশ নিজেকে র’-এর লোক বলে দাবি করেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি আইএসআই চর। ইডি-র যদিও দাবি, দুবাইয়ের এক ব্যক্তি একটি মামলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিলেন রাজেশ্বরকে। দায়িত্বশীল অফিসার হিসেবে রাজেশ্বর তা দফতরকে জানিয়েছেন। ওই তথ্য তদন্তের কাজেও লেগেছে।