সঙ্ঘ ও দলের হস্তক্ষেপের পর আপাতত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তবে স্বভাবের তারণায় এখনও পুরোপুরি ইতি টানতেও পারছেন না।
ইউপিএ আমলে নিযুক্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনকে সরাসরি অপসারণের দাবি তুলে দেশ-বিদেশে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন স্বামী। তার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে আসেন রাজন। অবশেষে নিজেই বিদায় ঘোষণা করেছিলেন। রক্তের স্বাদ পেয়ে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী গতকাল তাঁর পরবর্তী নিশানা করেছিলেন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমকে। কিন্তু অরুণ জেটলি থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদ, মায় দলের পক্ষ থেকেও স্বামীর এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করা হয়। বিজেপি সূত্রের খবর, গতকাল রাতেই রাজনাথ সিংহ কথা বলেন স্বামীর সঙ্গে। সঙ্ঘের পক্ষ থেকেও হস্তক্ষেপ করা হয়। তার পরেই আজ যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করেন স্বামী।
আজ সকালে টুইট করে স্বামী বলেন, ‘‘যদি সব কিছু জানার পরেও বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার মনে করে অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম এক জন সম্পদ, তা হলে আমি আপাতত আমার দাবি স্থগিত রাখছি। কিন্তু সত্য প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করব।’’ এ কথা বলেও অরবিন্দের প্রতি শ্লেষ প্রকাশ করতে ছাড়েননি তিনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এক জন দেশপ্রেমিক কী করে এক বিদেশি রাষ্ট্রকে ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারমর্শ দিতে পারেন? রাজন বিদায় সুনিশ্চিত করার পর ক’দিন আগেই সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর ঝুলিতে এমন ২৭ জন আমলার নাম রয়েছে, যাঁরা সনিয়া গাঁধীর অনুগত। পি চিদম্বরম তাঁদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে গিয়েছেন। একে একে এই আমলাদের মুখোশ খুলবেন তিনি।
আরও পড়ুন: স্বামী সরাতে চান অর্থ-উপদেষ্টাকেও
এই সূত্র ধরে আজ আর এক জন আমলার বিরুদ্ধেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি টুইটারে। টুইট করে এক ব্যক্তি স্বামীকে পরামর্শ দেন, অর্থবিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাসকেও তামিলনাড়ুতে ফেরত পাঠানো উচিত। এই বক্তব্যকে সমর্থন করে জবাবে স্বামী লেখেন, মহাবলীপুরমে এক সম্পত্তি মামলায় এই আমলা চিদম্বরমকে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু নিজে থেকে আজ শক্তিকান্ত দাসকে অপসারণের দাবি তোলেননি বিজেপির এই নেতা। ঘটনাচক্রে এই আমলাও সরাসরি অরুণ জেটলির মন্ত্রকের অধীনে। এ যাবৎ যত জন আমলার বিরুদ্ধে স্বামী সরব হয়েছেন, তাঁরা সকলেই জেটলির মন্ত্রকের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত।
গতকালই জেটলি স্বামীর বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ উগড়ে বলেন, বক্তব্যে সংযম থাকা দরকার। স্বামীর বক্তব্য দলের সভাপতি অমিত শাহও খণ্ডন করেছেন। বিজেপি সূত্রের মতে, জেটলি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহের গোচরেও এনেছেন। এর পর অমিত শাহ সঙ্ঘ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরেই সঙ্ঘ ও দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। রঘুরাম রাজনের সময়ে দলের পক্ষ থেকে এমন কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। তার পর রঘুরাম যখন নিজে থেকে বিদায় ঘোষণা করলেন, তাতে আরও উৎসাহ বেড়েছিল স্বামীর। যদিও জেটলির প্রতি স্বামীর যে ক্ষোভ রয়েছে, সেটি আজও প্রকট হয়েছে। স্বামী আজ বলেন, ‘‘জেটলি কী বলছেন, তাতে আমার কী যায় আসে? কিন্তু দল ও সরকার যদি সব কিছু জেনেও অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমকে মাফ করে দেয়, তা হলে আমার কিছু করার নেই।’’ রাজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওই বিষয়টি এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে।’’