এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
ফাইল, ল্যাপটপ, কূটনীতির তাত্ত্বিক সম্মেলন, শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের আগে দ্রুত ‘টকিং পয়েন্টস’ ঝালিয়ে নেওয়া, পরিশীলিত নীচু স্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথন। ছিপছিপে চেহারার নতুন বিদেশমন্ত্রী অভ্যস্ত এই যাপনেই। সাউথ ব্লকের কুর্সিতে বসার পর যিনি তাঁর মন্ত্রককেও করতে চাইছেন একই রকম মেদহীন।
জাঁকজমক, আড়ম্বর ধাতে নেই এস জয়শঙ্করের। ফলে মন্ত্রীশান্ত্রীর চর্তুদোলায় যে তিনি চাপবেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সঙ্গী অফিসারদের। সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, জয়শঙ্কর এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন যে, বেসরকারি বিমানেই তিনি বিদেশ সফর করবেন। একমাত্র যে সব জায়গায় সুবিধামতো উড়ান পাওয়া যাবে না, সেখানে বাধ্য হয়ে বিদেশমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ বিমান ‘এমব্রেয়ার’ ব্যবহার করবেন। মনমোহন সিংহের জমানায় ব্রাজিল থেকে ১৪ আসনের ‘এমব্রেয়ার’ জেট কেনা হয়েছিল। তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় অল্প দূরত্বের সফরে সেটি ব্যবহার করতেন। পরে অন্য বিদেশমন্ত্রীরা।
প্রাথমিক ভাবে স্থির রয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সফর শুরু করবেন জয়শঙ্কর। গত ৭ তারিখ থিম্পু ঘুরে এসেছেন। যাতায়াত করেছেন বেসরকারি বিমানে, অন্য যাত্রীদের সঙ্গে। সূত্রের খবর, নেপালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে পৃথক ভাবে চিন্তাভাবনা করছেন বিদেশমন্ত্রী। বিদেশসচিব থাকাকালীন ২০১৫ সালে মদেশীয়দের আন্দোলনের জেরে ভারত-বিরোধী তুমুল বিক্ষোভের সময় কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। সে সময় দৌত্য সফল হয়নি। এ বার মোদীর এই বিপুল জয়ের কূটনৈতিক মর্ম বোঝাতে নেপালের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় বারবার যেতে দেখা যাবে তাঁকে।
সাউথ ব্লকের মতে, মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পেয়ো অথবা জাপানের বিদেশমন্ত্রী তারো কানোর ঢংয়েই প্রাশাসনিক কাজ চালাবেন জয়শঙ্কর। বিদেশ সফরের সময় খুবই ছোট প্রতিনিধিদল সঙ্গে নিয়ে যাবেন। ন্যূনতম সময়ে কাজ শেষ করে দ্রুত ফিরতি বিমান ধরবেন। বিদেশসচিব বিজয় গোখলে ও আরও চার সচিবকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বিদেশ সফরে সঙ্গী হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। যুগ্মসচিবদেরও নিজেদের নির্দিষ্ট কাজ ছেড়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ গিয়ে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। জয়শঙ্করের বক্তব্য, অফিসারদের কাছ থেকে সর্বদা নির্দিষ্ট ব্রিফিং-এরও বিশেষ প্রয়োজন নেই তাঁর। নিজেই বুঝে নিতে পারবেন।
চুম্বকে, প্রথামাফিক মন্ত্রী নন, বরং কর্পোরেট সংস্থার প্রধান তথা ‘চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার’-এর মতো করেই বিদেশ মন্ত্রক চালাতে চান জয়শঙ্কর। আড়ম্বর, অনুষ্ঠানের থেকে যিনি জোর দিতে চান ‘বিজনেস’-এ। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘যা মনে হচ্ছে জয়শঙ্কর কাজ করবেন সিইও -র মতো। সঙ্গে থাকবেন সিওও (চিফ অপারেটিং অফিসার), অর্থাৎ বিদেশসচিব বিজয় গোখলে!’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।