তাঁর ঘাড়ে দায় চাপালে হবে না, বোঝালেন গর্গ

শুধু আরএসএস নয়। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরেরাও ডলারে ঋণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০২:০৭
Share:

বিদ্যুৎসচিবের দায়িত্ব নিচ্ছেন সুভাষচন্দ্র গর্গ। ছবি: পিআইবি

তিনি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করেননি। তাঁকে অর্থসচিবের পদ থেকে সরানোর সঙ্গে স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার কোনও সম্পর্কও নেই। তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ করে সব দায় তাঁর ঘাড়ে চাপানো চলবে না বলে আজ স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিলেন সদ্য প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ।
বাজেটে বিদেশ থেকে ডলারে ধার করার ঘোষণা নিয়ে আরএসএসের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ প্রবল আপত্তি তুলেছিল। গর্গ আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সব দিক ভেবেচিন্তেই বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তিনি যত দিন অর্থ মন্ত্রকে ছিলেন, তত দিন কেউ এ নিয়ে আপত্তি করেননি। এমনকি সরকারও এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেনি।
শুধু আরএসএস নয়। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরেরাও ডলারে ঋণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সরকারের তরফে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছিল, এটা গর্গেরই পরিকল্পনা। সংসদে বাজেট পাশ হতেই মোদী সরকার গর্গকে অর্থসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু গর্গ আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন, সরকারের সকলে মিলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে গর্গ বলেন, ‘‘সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত বন্ডের মাধ্যমে ডলারে ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্য হল, যাতে দেশে বেসরকারি সংস্থার ঋণ নেওয়ার জন্য আরও অর্থ থাকে। এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করে নেওয়া। ফায়দা অনেক, ঝুঁকি খুবই কম। আমি অর্থ মন্ত্রকে থাকা পর্যন্ত এমন কাউকে শুনিনি, যিনি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এমনকি সরকারও এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেনি।’’ প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা, আরএসএস-এর নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, এত বড় সিদ্ধান্তের আগে কোনও আলোচনা হয়নি। গর্গের জবাব, ‘‘আপনারা বিভিন্ন জায়গা থেকে কী শুনছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করব না।’’
গর্গকে অর্থসচিব থেকে বিদ্যুৎসচিবের পদে বদলির পরেই তিনি জানিয়ে দেন, তিনি বিদ্যুৎসচিবের পদ গ্রহণ করছেন ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে স্বেচ্ছাবসরও নিতে চলেছেন। সরকারি চাকরির শর্ত মেনে অক্টোবর পর্যন্তই তিনি কাজ করবেন। গর্গের এই ভিআরএস নেওয়াকে কার্যত ‘বিদ্রোহ’ হিসেবেই দেখছিল আমলামহল। মোদী সরকারও এর ফলে প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে। কারণ মোদী জমানায় কোনও আমলা এ ভাবে বদলিতে অখুশি হয়ে পদত্যাগের রাস্তায় হাঁটেননি।
আজ বিদ্যুৎসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে গর্গ দাবি করেছেন, তাঁর বদলির সঙ্গে ভিআরএস নেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। বদলির আগেই ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে তাঁর এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সরকারের অস্বস্তি কমাতে, উপরমহলের চাপের মুখে তিনি এই সাংবাদিক সম্মেলন করছেন কি না প্রশ্ন করা হলে গর্গ তা অস্বীকার করেন।
গর্গকে সরানোর পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এখন অর্থ মন্ত্রককে ডলারে ঋণের সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, ডলারের বদলে বিদেশ থেকে টাকার মূল্যেই বন্ড ছেড়ে ঋণ নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে বাজেটের ঘোষণা থেকে পুরোপুরি পিছু হঠতে হবে মোদী সরকারকে। অর্থ মন্ত্রকের এক আমলা বলেন, ‘‘মোদী জমানায় এমন নজির আগেও রয়েছে। ২০১৬-তে বাজেটে অরুণ জেটলি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তোলার উপরে কর বসিয়েও পরে পিছু হঠেন।’’ মোদী জমানার একেবারে শুরুতে অরবিন্দ মায়ারামকে অর্থসচিবের পদ থেকে সরিয়ে পর্যটন মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছিল বলেও মনে করিয়ে দিচ্ছেন নর্থ ব্লকের আমলারা।
এর আগে মোদী সরকারের হয়েই গর্গ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাণ্ডার থেকে অতিরিক্ত অর্থ রাজকোষে পাঠানোর পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নরদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এর পর বিষয়ে প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালানের নেতৃত্বে কমিটি তৈরি হয়। গর্গই সেখানে অর্থ মন্ত্রককের প্রতিনিধি ছিলেন। কমিটি একবারের বদলে ধাপে ধাপে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার থেকে টাকা পাঠানোর সুপারিশ করতে চাওয়ায় সেই রিপোর্টে সই করতে রাজি হননি গর্গ। এই বিষয়টিও অনেকে ভাল চোখে দেখেননি। আজ গর্গ যুক্তি দেন, ‘‘কমিটিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এখনও আলোচনা চলছে। মন্ত্রকের নতুন প্রতিনিধি তাতে অংশ নেবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement